
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কানাইপুর বাজার এলাকায় দুই বাসের তীব্র মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালেন তিনজন। আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সংবাদ প্রতিবেদন
ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক নারীসহ তিনজন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার কানাইপুর বাজার এলাকায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনাটি ঘটে ঢাকাগামী “রয়েল এক্সপ্রেস” এবং চুয়াডাঙ্গাগামী “ডিডি পরিবহন” নামের দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
নিহত ও আহতদের পরিচয়
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় মিলেছে—রঞ্জিত কুমার এবং আতিয়ার রহমান। তৃতীয় নিহত নারীর নাম-পরিচয় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে গুরুতর সাতজনকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুর্ঘটনার বিবরণ
হাইওয়ে করিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন আহমেদ জানান—
“ঢাকাগামী রয়েল এক্সপ্রেস বাসটি দ্রুত গতিতে আসছিল। বিপরীত দিক থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী ডিডি পরিবহনও সমান গতিতে এগিয়ে আসে। কানাইপুর বাজার এলাকায় পৌঁছেই দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।”
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পরপরই অন্তত ১০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে এক নারীসহ তিনজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি আহতদের চিকিৎসা চলমান।
উদ্ধারকাজ ও যান চলাচল স্বাভাবিক
দুর্ঘটনার পর প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের যৌথ প্রচেষ্টায় রাস্তা পরিষ্কার করে স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করা হয়।
স্থানীয়দের বক্তব্য
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন—
“দুর্ঘটনার শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে আশেপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসে। ঘটনাস্থলে এসে দেখি, উভয় বাসের সামনের অংশ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যাত্রীরা চিৎকার করছে।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিরিন আক্তার জানান—
“আমরা দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছিল গাড়ির ভেতর।”
সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর সমস্যা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫,০০০ মানুষ এবং আহত হয়েছেন ৭,০০০-এরও বেশি। প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—অতিরিক্ত গতি, অবহেলাপূর্ণ ড্রাইভিং, সড়কের খারাপ অবস্থা এবং সড়ক শৃঙ্খলার অভাব।
ফরিদপুর-ঢাকা-খুলনা মহাসড়কটি দেশের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। প্রতিদিন এই পথে শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে অতিরিক্ত গতি এবং যাত্রী চাপের কারণে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি।
দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্ঘটনা কমাতে প্রয়োজন—
- চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ
- সড়কে পর্যাপ্ত গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন
- ক্লান্ত ড্রাইভিং রোধে আইন প্রয়োগ
- নিয়মিত যানবাহন পরীক্ষা
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে বাস্তবে এসব উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক জানান—
“দুর্ঘটনার খোঁজ পেয়েই আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। একটি সচেতন, নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার, পরিবহন মালিক, চালক ও যাত্রী—সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
MAH – 12318 , Signalbd.com