বিশ্ব

গাজায় পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্টের জন্য দাঁড়ানো ১০ শিশুকে হত্যা করল ইসরাইল

Advertisement

 ফিলিস্তিনের গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো শিশুদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলা। নিহতদের মধ্যে ১০ শিশু ও ২ নারী। চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে সংঘটিত হামলায় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

লাইনে দাঁড়ানো শিশুদের উপর বোমা হামলা

গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ। এই শহরের একটি মেডিকেল পয়েন্টে শিশু ও নারীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট সংগ্রহ করতে। এমন সময় ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ১৫ জন, যার মধ্যে ১০ জনই শিশু এবং ২ জন নারী। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্রে এই হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন শতাধিক গাজাবাসী। তারা সবাই ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভোগা সন্তানদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা নেমে আসলে মুহূর্তেই কান্নার সাগরে পরিণত হয় সারা এলাকা।

হামলার পেছনের ব্যাখ্যা: ইসরাইলের দাবি ও প্রতিক্রিয়া

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় ‘হামাস সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তবে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় তারা ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছে এবং তদন্তের কথা বলেছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো শিশুদের লক্ষ্য করে এভাবে হামলা চালানো কোনোভাবেই যৌক্তিক বা আত্মরক্ষামূলক নয়।

গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট

ইতিমধ্যে গাজা অঞ্চল ভয়াবহ খাদ্যসংকট এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রতিদিন গাজায় কমপক্ষে ৫০০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী দরকার, অথচ বর্তমানে পৌঁছায় মাত্র ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক। ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট বলতে ভিটামিন ডি, আয়রন ট্যাবলেট, ওমেগা থ্রি, গুড়ো প্রোটিনসহ নানা ধরনের পুষ্টিসামগ্রী বোঝানো হয়—যা সেখানে বর্তমানে সোনার চেয়েও দামী।

পরিবারগুলোর আর্তনাদ: যারা হারাল সবকিছু

হামলায় নিহত শিশুদের পরিবারের কান্না থামছে না। একজন মা বলেন, “আমার সন্তান শুধু একটু দুধের পাউডার চেয়েছিল… আমি তাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম লাইনে, এখন শুধু তার নিথর দেহ আমার সামনে পড়ে আছে।”

স্থানীয় সিভিল ডিফেন্সের একজন কর্মী জানান, “বাচ্চাদের শরীর খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছে। কাউকে চিনতেই পারছি না।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নিন্দা ও উদ্বেগ

এই নির্মম ঘটনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, ও চিকিৎসা সহায়তাকারী সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর যুদ্ধক্ষেত্র।”

তিনি আরও বলেন, “ত্রাণের পথ বন্ধ রেখে এই ধরনের হামলা কেবল একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার ইঙ্গিত দেয়।”

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা: আলোচনায় অচলাবস্থা

দোহায় ইসরাইল ও হামাস প্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা চলছে যুদ্ধবিরতি আনতে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই হামলা আরও স্পষ্ট করে দিল—আলোচনা প্রক্রিয়া এখনো অন্ধকারে।

হামাসের মুখপাত্র বলেন, “ইসরাইলের এই আক্রমণ যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে সম্পূর্ণ ভণ্ডুল করেছে। আমরা আর কোনোভাবে এই হত্যাযজ্ঞ সহ্য করবো না।”

শিশুদের উপর হামলা: মানবতাবিরোধী অপরাধ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো শিশুদের টার্গেট করা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এর আওতায় বিষয়টি তদন্তযোগ্য এবং অভিযুক্তদের বিচার হতে পারে।

গাজার শিশুরা কি বাঁচার অধিকার হারিয়েছে?

গাজায় শিশুদের এখন সবচেয়ে বড় স্বপ্ন—একদিন পেটভরে খেতে পারবে, শান্তিতে ঘুমোতে পারবে। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় সেই স্বপ্ন আজ ধ্বংসের কিনারায়। আন্তর্জাতিক সমাজ কতদিন মুখ বুজে থাকবে?

“বিশ্লেষকদের মতে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাবে গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে।”

এম আর এম – ০২৬৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button