বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে শাবানা নামটি শুধু একটি নাম নয়, বরং এক মহীরুহ। ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ঢাকাই চলচ্চিত্রের রাণী ছিলেন তিনি। তার অভিনয় দক্ষতা, রূপ-সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব আজও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে অম্লান।
দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারও নিজের মাতৃভূমিতে পা রেখেছেন এই কিংবদন্তি নায়িকা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ তিনি দেশে এসেছিলেন। এরপর করোনার মহামারি, ব্যস্ততা এবং পারিবারিক কারণে দীর্ঘ সময় দেশে আসা হয়নি। এবার ফিরেছেন নীরবে, কোনো বড় আয়োজন ছাড়াই। বর্তমানে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসে নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন তিনি।
হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবন
শাবানার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ষাটের দশকে। প্রথমে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করলেও পরবর্তীতে নায়িকা হিসেবে দর্শকের মন জয় করেন। তার প্রথম নায়িকা চরিত্র ছিল চলচ্চিত্র ‘চকোরী’ (১৯৬৯), যেখানে তার নায়ক ছিলেন নাদিম। এর পরের ইতিহাস সোনালী—তিন দশকের বেশি সময় তিনি ঢালিউডে রাজত্ব করেছেন।
তবে ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে অবসর নেন এবং স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে স্থায়ীভাবে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। তখন থেকেই তিনি মূলত নিউ জার্সিতে বসবাস করছেন। শাবানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন—
“আমার পরিবারই আমার প্রথম অগ্রাধিকার। কাজের ভিড়ে পরিবারের জন্য সময় দিতে পারছিলাম না, তাই চলচ্চিত্র থেকে সরে আসা।”
অভিনয়ের শীর্ষে থাকা অবস্থায় বিদায়
যখন শাবানা চলচ্চিত্র থেকে সরে আসেন, তখন তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। মজার ব্যাপার হলো, তিনি নিজের ক্যারিয়ারে কখনোই গ্ল্যামারকে একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেননি। বরং নান্দনিক অভিনয়, আবেগপ্রবণ চরিত্রে গভীর ডুবে থাকা ছিল তার শক্তি।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে:
- অবাক পৃথিবী
- জননী
- দোস্ত দুশমন
- রংবাজ
- সীমানা পেরিয়ে
- আনারকলি
এইসব চলচ্চিত্রে তার অভিনয় তাকে শুধু বাংলাদেশের দর্শকের কাছে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি এনে দেয়।
প্রযোজনায় শাবানা
শুধু নায়িকা হিসেবেই নয়, শাবানা ছিলেন সফল প্রযোজকও। তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে মিলে তারা বেশ কিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। ২০২০ সালে দেশে আসার সময় তিনি বলেছিলেন, যদি অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যায়, আবারও প্রযোজনায় ফিরবেন। তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জীবন ও পরিবার
বর্তমানে শাবানা তার স্বামী, সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। প্রবাস জীবনে তিনি বেশ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় না থাকলেও মাঝে মাঝে তার ছবি ভাইরাল হয়।
এবারের দেশে আসা কেন?
এইবার দেশে আসার মূল কারণ নিয়ে শাবানা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, তিনি ব্যক্তিগত কাজের জন্য ফিরেছেন। এছাড়া কিছু প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে বৈঠকও হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে শাবানা বা তার পরিবার কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।
তবে ভক্তদের মধ্যে জল্পনা রয়েছে—
“শাবানা কি আবার চলচ্চিত্রে ফিরবেন?”
এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তবে জানা গেছে, তিনি নীরবেই কিছুদিন দেশেই থাকবেন এবং তারপর আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে শাবানার অবদান
শাবানা শুধু একজন নায়িকা নন, বরং ঢাকাই চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে তার ভূমিকা অপরিসীম।
- তিনি ২০০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
- সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
- অসংখ্য বাণিজ্যিক ও সমালোচনামূলক সাফল্য তার ঝুলিতে।
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন অভিনেত্রী খুব কমই আছেন, যিনি তিন দশক ধরে রাজত্ব করেছেন।
ভক্তদের আবেগ – সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
শাবানা দেশে ফিরেছেন—এই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনেকে লিখেছেন,
“আমাদের প্রিয় নায়িকা দেশে ফিরেছেন, এটা বড় আনন্দের খবর।”
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তার পুরনো ছবি শেয়ার করে নেটিজেনরা স্মৃতিচারণ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
যদিও শাবানা এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি, তবে অনেকের ধারণা—তিনি হয়তো কোনো বিশেষ চলচ্চিত্রে অতিথি চরিত্রে কাজ করতে পারেন অথবা প্রযোজনায় ফিরতে পারেন। কিছু প্রযোজক ও পরিচালক নাকি ইতোমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
৫ বছর পর শাবানার দেশে ফেরা শুধু একটি সংবাদ নয়, বরং ঢাকাই চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য আবেগের মুহূর্ত। যিনি একসময় কোটি দর্শকের হৃদয়ের রানী ছিলেন, তার ফিরে আসা মানেই নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
MAH – 12680, Signalbd.com



