ফ্যাক্ট চেক

কিডনি পাথরের সমস্যা কমাতে ঘরোয়া ৩ উপায়

কিডনি পাথর বা বৃক্কপাথর একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা, যা সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আধুনিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অপর্যাপ্ত পানি পান করার কারণে এই রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। কিডনি পাথর হলে মূত্রনালিতে ছোট ছোট কঠিন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা অন্যান্য খনিজ জমাট বাঁধে, যা তীব্র ব্যথা, পায়খানা বা প্রস্রাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চললে এই সমস্যাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব কিডনি পাথরের সমস্যা কমাতে ঘরোয়া তিনটি কার্যকর উপায়, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে পাথর তৈরির ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

কিডনি পাথর কী এবং কেন হয়?

কিডনি পাথর মূলত মূত্রে উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ ও লবণের অতিরিক্ত জমাট বাঁধার ফলে গঠিত কঠিন পদার্থ। ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর সবচেয়ে সাধারণ, তবে অন্যান্য প্রকার যেমন ইউরিক অ্যাসিড পাথরও হতে পারে। এই পাথরের আকার, অবস্থান ও সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে, যা প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করে।

অপর্যাপ্ত পানি পান, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ওজন বৃদ্ধি, কিছু ওষুধ এবং জিনগত কারণগুলো পাথর গঠনে ভূমিকা রাখে।

প্রচুর পানি পান করুন

ডাক্তারদের মতে, পর্যাপ্ত পানি পান করাই কিডনি পাথর প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। যখন মূত্র পাতলা থাকে, তখন খনিজ ও লবণের জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কমে যায়। দিনে অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় বেশি পানি পান করা জরুরি।

পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। যারা কিডনি পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান অবশ্যক। এছাড়া, পানি ছাড়াও লেবুর রস যুক্ত পানি পান করাও পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে।

লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা

লেবুর মধ্যে থাকা সিট্রেট উপাদান ক্যালসিয়াম পাথরের গঠন রোধ করে। কিডনির মধ্যে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট জমাট বাঁধার ফলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর তৈরি হয়, যা লেবুর রস নিয়মিত খেলে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ২ লিটার পানির সঙ্গে ৪ আউন্স লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পাথরের পুনরাবৃত্তি কমে। লেবুর রস কিডনির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে, যা পাথর গঠনের পরিবেশকে প্রতিকূল করে তোলে।

তবে খালি লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া বেশি ভালো। যারা পেট সংক্রান্ত সমস্যা যেমন এসিডিটি বা আলসার ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে লেবুর রস সাবধানে গ্রহণ করতে হবে।

ডালিমের রস পান করুন

ডালিমের রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীর থেকে মুক্ত মৌল বা ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে সাহায্য করে। মুক্ত মৌল বেশি হলে কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ দিনের জন্য নিয়মিত ডালিমের রস গ্রহণে মূত্রে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের পরিমাণ কমে।

ডালিমের রসে থাকা ভিটামিন সি, পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কিডনির ক্ষতি কমায় ও সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে। এটি মূত্রনালির প্রদাহ কমাতে ও পাথর গঠনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

তবে ডায়াবেটিস বা রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে ডালিমের রস খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি পাথরের সমস্যা প্রতিরোধে অন্যান্য ঘরোয়া করণীয়

পানি, লেবুর রস ও ডালিম ছাড়াও কিডনি পাথর প্রতিরোধে কিছু জীবনধারা পরিবর্তন জরুরি।

১. লবণ ও প্রোটিনের মাত্রা কমানো: অতিরিক্ত লবণ ও প্রাণীজ প্রোটিন কিডনির উপর চাপ বাড়ায় এবং পাথর গঠনে সাহায্য করে। তাই সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কিডনির কাজ বাধাগ্রস্ত করে। নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পাথর তৈরির ঝুঁকি কমায়।

৩. প্রস্রাব নিয়মিত করা: দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ে। তাই মূত্রত্যাগে অনিয়মিততা এড়ানো উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক

যদিও এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো কিডনি পাথরের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, তবুও কিডনি পাথরের লক্ষণ পেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালা, রক্তপাত বা জ্বর হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা জরুরি।

পাথরের আকার ও অবস্থান অনুযায়ী ডাক্তার ঔষধ, পাথর ভাঙ্গার চিকিৎসা বা সার্জারি পরামর্শ দিতে পারেন। ঘরোয়া প্রতিকারগুলো শুধুমাত্র রোগের পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক।

সারসংক্ষেপ  

বর্তমান জীবনের ব্যস্ততায় ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে কিডনি পাথরের সমস্যা বেড়ে গেছে। তবে নিয়মিত পানি পান, লেবুর রস ও ডালিমের রস ব্যবহার এবং সঠিক জীবনযাত্রার মাধ্যমে কিডনি পাথর প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঘরোয়া এই প্রতিকারগুলো সহজলভ্য এবং কার্যকর, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে থেকে চিকিৎসা বা ওষুধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে সময় মতো চিকিৎসা করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

আপনার স্বাস্থ্যই সেরা ধন। তাই আজ থেকেই শুরু করুন সঠিক পানীয় ও খাদ্যাভ্যাস, আর দূরে থাকুন কিডনি পাথরের ঝুঁকি।

এম আর এম – ০৭৯২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button