বিশ্ব

ইলন মাস্ককে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ মার্কিন অর্থমন্ত্রীর

বিশ্বের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি জগতের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক যখন ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন, ঠিক একদিন পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট তাকে সরাসরি পরামর্শ দিলেন রাজনীতির চেয়েও তার ব্যবসায় মনোযোগ দেয়া উচিত।

ইলন মাস্ক, যিনি টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গত শনিবার ঘোষণা দেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। এই সিদ্ধান্ত তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর ছাড় ও সরকারি ব্যয় বিলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় নিয়েছেন। মাস্ক মনে করেন, এই নতুন কর ও ব্যয় বিল যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দেউলিয়া করে দেবে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রীর সরাসরি বার্তা

রোববার সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে স্কট বেসেন্ট বলেন, “মাস্কের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ হয়তো চাইবে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকুন।” তিনি আরো যোগ করেন, “আমার ধারণা, মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তারা চান তিনি ব্যবসায় মনোযোগী থাকুন।”

মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্টের মতে, মাস্কের নেতৃত্বে থাকা সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) যদিও ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, মাস্ক নিজে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ততটা জনপ্রিয় নন। তার এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, রাজনীতিতে তার অবস্থান শক্ত নয় এবং এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন।

ব্যবসায় নেতাদের উদ্বেগ

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আজোরিয়া পার্টনার্স মাস্কের টেসলা কোম্পানির সঙ্গে একটি যৌথ তহবিল চালুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার পর তারা সেই উদ্যোগ স্থগিত করেছে। কারণ, মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তার টেসলার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

আজোরিয়ার সিইও জেমস ফিশব্যাক বলেছেন, “মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কোম্পানির পরিচালনায় তার দায়িত্বের মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, সেটা পরিচালনা পর্ষদ দ্রুত যাচাই করবে।”

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

মাস্ক নিজে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা অপচয় ও দুর্নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং একদলীয় ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যা দেশের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগে টুইটার) ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমরা যখন অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করার কথা ভাবি, তখন আমরা গণতন্ত্রে নেই, বরং একদলীয় ব্যবস্থায় বাস করছি। আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠন করা হলো।”

দল গঠনের এক দিন আগে, গত ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে মাস্ক এক্সে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন। এতে তিনি অনুসারীদের প্রশ্ন করেছিলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান দল – রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি – থেকে মুক্তি চান কি না। দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই দ্বিদলীয় ব্যবস্থা দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে।

মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্ক

যদিও মাস্ক এখন দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরোধী, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে তিনি বিপুল অর্থ দিয়েছেন। ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তবে পরে তিনি ওই দায়িত্ব থেকে সরে যান। এর পর থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়ে ওঠে।

ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা শুধু মার্কিন রাজনীতিতেই নয়, বরং তার ব্যবসার উপরেও সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়ীদের এবং বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণে টেসলা ও স্পেসএক্সের পরিচালনা পর্ষদ তার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াকে খুব একটা পছন্দ করছে না। এর ফলে মাস্কের ব্যবসায়িক দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী এবং বিনিয়োগকারীদের সমালোচনা এবং উদ্বেগ দেখা দিলেও মাস্ক দৃঢ়ভাবে নিজের উদ্দেশ্যে অটল রয়েছেন। তার এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে এই পদক্ষেপ মাস্কের ব্যস্ত ব্যবসায়িক জীবনে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন সময় বলে দেবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button