বিশ্ব

গাজার ৮৫ ভাগই চলে গেছে দ’খ’লে, বের করে দেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের!

Advertisement

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা আগ্রাসনে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সংকীর্ণ ও অরক্ষিত এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, শুধু গত চার মাসে পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৭ লাখ ১৪ হাজার মানুষ |
গাজা উপত্যকার অধিকাংশ অঞ্চল এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উপত্যকাটির প্রায় ৮৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

ঘটনার বিস্তারিত: কে কী বলছে

বুধবার (৩ জুলাই) জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গাজার বাসিন্দাদের অবস্থা এখন ভয়াবহ। ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক আগ্রাসনের কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। ত্রাণকর্মীরা আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাতেও পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, “খান ইউনিসের দুটি বড় এলাকায় উচ্ছেদের নির্দেশ জারি করা হয়েছে, যেখানে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন।”

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যেমন পানি সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতেও প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল সাতার নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধারে এখন আর পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে পুরো শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

কীভাবে শুরু হলো এই সংঘাত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন নয়। তবে চলতি বছরের মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যায়। ইসরায়েল আবারও পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এর ফলে ক্রমাগত বিস্তৃত হয়েছে তাদের দখলদারি, এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে।

গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ ও অভিযান পরিচালনা করে বসবাসযোগ্য অঞ্চলগুলো একের পর এক ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

মানবিক সংকট: ভয়াবহ চিত্র

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে গাজার ৭ লাখ ১৪ হাজার মানুষ পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু গত রোববার থেকে সোমবার—মাত্র ২৪ ঘণ্টায় উচ্ছেদ করা হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার মানুষকে।

আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, জরিপ করা অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। কোনো আশ্রয় নেই, নেই পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি বা চিকিৎসা সুবিধা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে গাজার জনগণ।

পরিসংখ্যান ও তীব্র সংকট

  • গাজার ৮৫% ভূখণ্ড এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে
  • ৮০ হাজার মানুষ খান ইউনিস অঞ্চল থেকে উচ্ছেদ
  • চার মাসে ৭ লাখ ১৪ হাজার মানুষ পুনরায় বাস্তুচ্যুত
  • গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার মানুষ উচ্ছেদ
  • বাস্তুচ্যুতদের ৯৭% বর্তমানে আশ্রয়হীন

এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা বোঝায় সংকট কতটা গভীর।

জরুরি পরিসেবার ওপর চাপ

উচ্ছেদ ও আগ্রাসনের কারণে গাজার জরুরি পরিসেবাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন—সব কিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই গাজার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।

ডুজারিক জানিয়েছেন, “জলাধারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হবে।”

বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা

জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বড় কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরণের অবরোধ ও দখলদারিতে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে, যা শুধু ফিলিস্তিন নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

“এই জলাধার যদি ধ্বংস হয়, গোটা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে”—স্টিফেন ডুজারিক, জাতিসংঘ মুখপাত্র

কী হতে পারে সামনে

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও বিস্তৃত হতে পারে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনই কার্যকর হস্তক্ষেপ না করে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—গাজার এই মানবিক বিপর্যয়ের শেষ কোথায়? এবং কবে গাজার সাধারণ মানুষ নিরাপদে নিঃশ্বাস নিতে পারবে?

এম আর এম – ০১৬৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button