বাংলাদেশ

মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে শেষবিদায় দিলেন বাবা

Advertisement

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেহেনাজ আফরি হুমায়রা (৯) নিহত হওয়ার ঘটনা পুরো দেশকে শোকাহত করেছে। মৃত্যুর পর বাবার মেহেনাজের কফিনে চুমু দিয়ে বিদায় নেওয়ার ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া গ্রামে নিহত মেহেনাজের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত 

গত সোমবার সকালবেলা উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অংশে বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় ছাত্রী মেহেনাজসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে মেহেনাজের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। বাবা দেলোয়ার হোসাইন, যিনি ওই স্কুলের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বিকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। এরপর মেহেনাজের গ্রামের বাড়িতে এই খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে।

বিমানটি মেহেনাজের শ্রেণিকক্ষের ঠিক সামনে বিধ্বস্ত হওয়ায় তার মা সুমী আক্তার পুরো ঘটনা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। মেহেনাজের বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুল থেকে ছুটি পেয়ে বাসায় ফেরার সময় তার মা তাকে নিতে আসছিলেন, কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার কারণে সে আর কখনো স্কুলে যেতে পারবে না।’

পারিবারিক পটভূমি ও শোকের বর্ণনা

দেলোয়ার হোসাইন ১৫ বছর ধরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, ‘মেহেনাজ আমার একমাত্র কন্যা। প্রতিদিনই আমি তাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতাম। আজ তার কফিনে চুমু দিয়ে শেষ বিদায় দিতে হলো। এটা বিশ্বাস করার মতো নয়।’

মেহেনাজের দাদা আবদুল বাছেদ বলেন, ‘আমার নাতনি আর আমাকে আর দাদু বলবে না। এমন শোক সহ্য করা খুব কঠিন।’ গ্রামের মানুষজনও মেহেনাজের অকাল মৃত্যুতে স্তম্ভিত এবং শোকাহত।

দুর্ঘটনার কারণ ও প্রশ্নাবলী

বাবা দেলোয়ার হোসাইন সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকায় কেনো বিমান প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্কুলে যায়। এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরো প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে।

এছাড়া, কর্তৃপক্ষের থেকে এখনো স্পষ্ট কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে। পরিবার ও স্থানীয়রা দ্রুত সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানায়, মেহেনাজের জানাজায় গ্রামের সব মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সকলে ছোট্ট মেয়েটির মৃত্যুর খবর শুনে শোকাহত হয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা কাঁদতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মেহেনাজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শোকপ্রকাশ করেছেন।

দুর্ঘটনার পরবর্তী করণীয় ও আশা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা জরুরি। এছাড়া, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যবস্থা নিতে হবে। মেহেনাজের মতো শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

বাবা দেলোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন, তিনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক তদন্ত ও ন্যায্য বিচার দাবি করবেন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

শেষ কথা

মেহেনাজের অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো জাতির জন্য একটি গভীর শোক। তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। এই দুর্ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনা নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।

এম আর এম – ০৪৬৮   , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button