ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ চুক্তি হচ্ছে বলে জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা: ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন, ভারতের সঙ্গে একটি ‘অনেক বড়’ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের অগ্রগতি সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকানদের কর ও ব্যয় হ্রাস আইনের প্রচারণার সময় বলেন, “আমরা দারুণ কিছু চুক্তি করছি। এর মধ্যে একটি সম্ভবত ভারতের সঙ্গে অনেক বড় চুক্তি, আমরা ভারতের বাজার খুলে দিতে যাচ্ছি।” তিনি আরও জানান, চীনের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি হয়েছে এবং এখন সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য আলোচনা: বর্তমান অবস্থা ও প্রত্যাশা
ভারতের প্রধান বাণিজ্য প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছে। তাদের আসার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্প এই চুক্তির সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করেন। এই বাণিজ্য আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প সরকার বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে ভারত শুল্ক আরোপ কার্যকর হওয়া আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ভারত মার্কিন পণ্যে শুল্ক হ্রাস করেছে। লক্ষ্য আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো, কারণ ২ এপ্রিল ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হওয়া ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে।
চুক্তির মূল বিষয়: কোন খাতগুলোতে শুল্ক ছাড়ের দাবি?
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনায় নানা খাত নিয়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত চাইছে:
- কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাতের শুল্ক হ্রাস,
- শিল্পপণ্য, গাড়ি (বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি),
- পানীয় ও পেট্রোকেমিক্যালস,
- দুগ্ধজাত পণ্য এবং
- কৃষিপণ্য যেমন আপেল, বাদামজাত ফল ও জিনগতভাবে পরিবর্তিত ফসলের শুল্ক কমানো হোক।
অন্যদিকে, ভারত চায়:
- শ্রমনির্ভর খাত যেমন পোশাক, গয়না, চামড়াজাত পণ্য,
- প্লাস্টিক, রাসায়নিক, চিংড়ি,
- তেলবীজ, আঙুর এবং কলার ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হোক।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের আশাবাদ
জুন মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি খুব দ্রুত সম্ভব হবে। উভয় পক্ষেরই যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে এবং আলোচনাগুলো ইতিবাচক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “দুটি দেশের মধ্যকার প্রথম ধাপের চুক্তি খুব শিগগিরই হবে।” এর ফলে, আশা করা যায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে।
২০৩০ সালের লক্ষ্য: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯১ বিলিয়ন ডলার (১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলার)। দুই দেশের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলার (৫০ হাজার কোটি ডলার) ছাড়িয়ে যাওয়া।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের কৌশল
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব কমার পর ট্রাম্প আবার বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে কৌশল সাজাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কানাডার সঙ্গে ডিজিটাল কর সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত করেছেন এবং চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তির আভাস দিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ চুক্তির কথা ঘোষণা করায় এই দিকটি স্পষ্ট হয় যে ট্রাম্প মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাণিজ্য চুক্তির ভারসাম্য এবং সতর্কতা
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে যে, যেকোনো বাণিজ্য চুক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বা একপক্ষীয় হতে পারবে না। তাদের মতে, চুক্তিগুলো যেন ভারসাম্যপূর্ণ হয় এবং দেশের কৃষক, ডিজিটাল পরিকাঠামো, ও নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়।
জিটিআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “৯ জুলাইয়ের মধ্যে সীমিত পরিসরের চুক্তি হওয়া সম্ভব, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ৮ মে স্বাক্ষরিত চুক্তি। তবে অবশ্যই এটি রাজনৈতিক চাপ মুক্ত ও কার্যকর হতে হবে।”
সারসংক্ষেপ: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য চুক্তি
- ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে ‘অনেক বড়’ বাণিজ্য চুক্তির কথা ঘোষণা করেছেন।
- ভারতের প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে বাণিজ্য আলোচনা চালাচ্ছে।
- শুল্ক ও বাজার প্রবেশ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার পথ সুগম হচ্ছে।
- কৃষি, দুগ্ধ, শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে শুল্ক ছাড় নিয়ে আলোচনা চলছে।
- ৯ জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি করার লক্ষ্যমাত্রা।
- ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি করার পরিকল্পনা।
- গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ভারসাম্যপূর্ণ ও সার্বভৌম চুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।