পানি নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজার পানির সংকট এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির খোঁজে বেরিয়ে এসে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি বাহিনী ‘তৃষ্ণা যুদ্ধ’ চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে জানিয়েছে গাজা প্রশাসন। এ হামলায় শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।
ঘটনার বিস্তারিত: পরিকল্পিত হামলার চিত্র
গাজার মিডিয়া অফিসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে বহু শিশু ও নারী।
সম্প্রতি মধ্য গাজার একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন। তাদের মধ্যে ৮ জনই শিশু। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই হামলা চালিয়েছে, যাতে গাজার নাগরিকরা পানির জন্য বাইরে বের হতেও ভয় পায়।
ধ্বংস করা হয়েছে পানির কূপ ও পরিকাঠামো
ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত গাজায় ১১২টি মিষ্টি পানির ভরাট কেন্দ্র এবং ৭২০টিরও বেশি কূপ ধ্বংস করেছে। এর ফলে ১২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে পড়েছেন। বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে বিশুদ্ধ পানি তো দূরের কথা, দূষিত ও লবণাক্ত পানিও পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “পানির সংকট এতটাই ভয়াবহ যে, মানুষ দূষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর সেই চেষ্টাই এখন জীবন নিয়ে খেলা হয়ে উঠেছে।”
মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করা হচ্ছে। বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে ‘মানবাধিকার ধ্বংসযজ্ঞ’ চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশুদ্ধ পানির অভাবে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, অপুষ্টি ও পানিবাহিত রোগ। গত কয়েক মাসে অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে অন্তত ৬৭ শিশু।
পরিসংখ্যান ও মানবিক ক্ষতির চিত্র
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার। শুধু পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৭০০ জনের বেশি মানুষ। এটি একটি জাতিগত নিধনের কৌশল হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
শুধু গত সপ্তাহেই গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০২ জন। এর মধ্যে গাজা সিটির নুসেইরাহ শরণার্থীশিবিরে একটি পানি বিতরণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে চালানো হামলায় নিহত হন ১০ জন এবং আহত হন ১৬ জন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আহ্বান
গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর এই বর্বরতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের লঙ্ঘন। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে গাজার পানির অবকাঠামো পুনরুদ্ধার এবং পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করা এবং যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“ইসরায়েল পানিকে অস্ত্র বানিয়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে”—গাজার মিডিয়া অফিসের বিবৃতি
ভবিষ্যতের শঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, অব্যাহত এই অবরোধ ও হামলা গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। যদি বিশ্ব সম্প্রদায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সারসংক্ষেপ
গাজার মধ্যাঞ্চলে পানি নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় শিশুসহ অন্তত ৭০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একে ‘পরিকল্পিত তৃষ্ণা যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে গাজার স্থানীয় প্রশাসন। পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো নিরীহ মানুষদের ওপর এমন হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন হলো, ‘পানির জন্য জীবন দিতে হবে’ — এ কেমন যুদ্ধ? মানবতার অস্তিত্ব কি আজ সত্যিই প্রশ্নের মুখে?’
এম আর এম – ০৩৩৯, Signalbd.com