সমগ্র ইউক্রেন চান পুতিন: রাশিয়ার আগ্রাসী উচ্চাকাঙ্ক্ষা নতুন উত্তেজনার কারণ

সেন্ট পিটার্সবার্গ অর্থনৈতিক ফোরামে ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, পুরো ইউক্রেনকেই রাশিয়ান ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে চান তিনি। ইউক্রেনসহ একাধিক দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এই ঘোষণায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ইউরোপ ও কানাডার সমর্থন আরও বাড়লেও, উত্তেজনা থামছে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফের ঘোষণা দিয়েছেন—তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সমগ্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশে পরিণত করা। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষত যখন ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে সহায়তা আরও জোরদার করছে।
পুতিনের ভাষণে কী ছিল?
সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুতিন বলেন, “রুশ ও ইউক্রেনীয়রা এক জাতি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, সমগ্র ইউক্রেন আমাদের।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যেখানে রুশ সৈন্য পা রাখে, সেই ভূমিই রাশিয়ার হয়।”
এই বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী সম্প্রসারণবাদী অবস্থানেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আগেও এমন কিছু ঘটেছিল?
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়। এরপর ডনবাস অঞ্চলেও সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।
পুতিনের সাম্প্রতিক বক্তব্য এই ধারাবাহিকতারই সর্বশেষ ধাপ, যেখানে তিনি ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড নিজের দাবি করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ইউক্রেন ও মিত্রদের কড়া বার্তা
পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, “রুশ সেনারা যেখানে যায়, সেখানে মৃত্যু ও ধ্বংস নিয়ে যায়।”
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও স্পষ্ট করে দেন, পুতিন শুধু ইউক্রেন নয়, বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ, মলদোভা এবং কাজাখস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত লক্ষ্য স্থির করেছেন।
সামরিক সহায়তা: ইউরোপীয়দের সক্রিয় অবস্থান
ন্যাটোর নবনিযুক্ত মহাসচিব মার্ক রুটে জানান, ইউরোপ ও কানাডা ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই ইউক্রেনকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে:
- প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
- উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি
- গোলাবারুদ
- নজরদারি ডিভাইস
এই সহায়তা ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা বন্ধ থাকা অবস্থায় বড় ঘাটতি পূরণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে আলোচনা
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি মার্কিন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “এই মুহূর্তে এই সরঞ্জামের চাহিদা অত্যধিক। ইসরায়েলকেও তা সরবরাহ করতে হচ্ছে।”
তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই সরঞ্জাম অত্যন্ত জরুরি বলে জানানো হয়েছে।
ক্রেমলিনের হুমকি: সহায়তা বন্ধ না হলে যুদ্ধবিরতি নয়
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “যদি পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করে, তাহলে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
তিনি আরও বলেন, “যারা শান্তি চায়, তাদের উচিত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা।”
এই হুমকি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, যা কেবল ইউক্রেন নয়, ইউরোপকেও সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।
ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকিতে
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া জার্মান সেনাবাহিনীর একটি গোপন নথিতে বলা হয়েছে, ২০২৩–৩০ সালের মধ্যে রাশিয়া একটি বড় আকারের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নথিতে উল্লেখ, “মস্কো ন্যাটোর সঙ্গে সংঘাতের জন্য নিজের সামরিক সক্ষমতা ও প্রতিরক্ষা শিল্পকে পুনর্গঠিত করছে।”
এই তথ্য ইউরোপীয় নেতাদের ভয় বৃদ্ধি করেছে এবং সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা চলমান।
সামনে কী হতে পারে?
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই ঘোষণা ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ভবিষ্যতে ইউরোপে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়।
যুদ্ধ কি সীমান্ত ছাড়িয়ে বিস্তার ঘটাবে? না কি কূটনৈতিক উদ্যোগে সমাধান মিলবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত, ইউক্রেন এখন শুধু যুদ্ধের ময়দান নয়, একটি বৈশ্বিক শক্তি পরীক্ষার কেন্দ্রবিন্দু।
এম আর এম – ০০৮৮, Signalbd.com