কর্মসংস্থান

কলিং ভিসায় ২৪ লাখ ৬৭ হাজার কর্মী নেবে মালয়েশিয়া

Advertisement

মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য কলিং ভিসা কোটা ফের চালু করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল মঙ্গলবার এক ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৬ জন বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা নিয়ে বিস্তারিত

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কলিং ভিসা সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ করেছে। এ বছরের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের জন্য মোট ১৩টি খাতের আবেদন গ্রহণ করা হবে। এই খাতগুলোতে কৃষি, বাগান, খনি খাতসহ সার্ভিস সেক্টরের হোলসেল অ্যান্ড রিটেল, ল্যান্ড ওয়্যারহাউস, সিকিউরিটি গার্ডস, মেটাল ও স্ক্র্যাপ ম্যাটেরিয়ালস, রেস্তোরাঁ, লন্ড্রি, কার্গো এবং বিল্ডিং ক্লিনিং অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নির্মাণ খাতে (কনস্ট্রাকশন) শ্রমিক নিয়োগ কেবল সরকারি প্রকল্পের জন্য সীমিত থাকবে। উৎপাদন খাতে (ম্যানুফ্যাকচারিং) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে মালয়েশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমআইডিএ) এর নতুন বিনিয়োগের জন্য।

আবেদন প্রক্রিয়া ও শর্তাবলী

মালয়েশিয়া এবার শুধুমাত্র খাতভিত্তিক অফিসিয়াল এজেন্সিগুলোকে আবেদন করার সুযোগ দিচ্ছে। আগের মতো সরাসরি নিয়োগকর্তা বা স্বাধীন এজেন্টদের জন্য আবেদন করা সম্ভব হবে না। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তা অনুমোদন করবে ফরেন ওয়ার্কার্স টেকনিকাল কমিটি এবং পরে জয়েন্ট কমিটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই কোটা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ সীমিত করে দেশীয় শ্রমিকের মোট জনশক্তির ১০% পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এই কোটার মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য কতজন অংশগ্রহণ করতে পারবে, তা এখনও জানানো হয়নি।

পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট

দীর্ঘ চার বছরের নিষেধাজ্ঞার পর ২০২২ সালের ৯ আগস্ট মালয়েশিয়া শ্রমবাজার খুলে দেয়। তবে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন যে, বিদেশি শ্রমিকদের কোটা পুনরায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আবেদন স্থগিত থাকবে।

এই দীর্ঘ বিরতির পর নতুন কোটা ঘোষণা করা হলো, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আগ্রহী শ্রমিকদের জন্য নতুন সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রভাব ও সম্ভাবনা

মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ অন্যান্য এশীয় দেশ থেকে প্রচুর শ্রমিকের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ ও সার্ভিস খাতের শ্রমিকদের চাহিদা পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কলিং ভিসা কোটা খোলার ফলে মালয়েশিয়ার উৎপাদন খাত আরও সক্রিয় হবে এবং স্থানীয় ব্যবসার জন্য বিদেশি শ্রমিকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং শর্তাবলী ঠিকভাবে নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

বর্তমান কোটা অনুযায়ী ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৬ জন শ্রমিক নিয়োগ করা সম্ভব। এর আগে কলিং ভিসা কোটা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা সীমিত ছিল। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরের পর সীমিতকরণ করা হবে দেশীয় জনশক্তির ১০% পর্যন্ত।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মালয়েশিয়ার শ্রম ও মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোটা খোলার মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি ও শিল্প ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী শ্রমিকদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সমাপ্তি

মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা কোটা খোলার ঘোষণায় বিদেশি শ্রমিকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আবেদন, যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের সব ধাপ মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রভাব পরবর্তী সময়ে পরিস্কার হবে।

এম আর এম – ০৯৫৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button