যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তেহরানে ফের একাধিক বিস্ফোরণ

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঠিক পরপরই ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। সক্রিয় করা হয়েছে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সামরিক ঘাঁটি এলাকা লক্ষ্য করেই এ হামলা বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা।
ঘটনার মূল বিবরণ
শনিবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। ইসলামশহর ও বিদগানে এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সময় আনুমানিক রাত ৩টা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যেতে থাকে। ঘটনাস্থলে দ্রুত সক্রিয় করা হয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
তেহরানবাসী সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে জানায়, তারা আকাশে অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট গানের আওয়াজ এবং আলোর ঝলকানি দেখেছেন।
সামরিক এলাকা লক্ষ্যবস্তু?
বিস্ফোরণের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিদগানে এলাকা, যা একটি পরিচিত সামরিক ঘাঁটি এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনার জন্য সুপরিচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে সামরিক সংবেদনশীল অঞ্চলগুলো — বিশেষত যেখানে রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা এবং রাডার ঘাঁটি রয়েছে।
তবে ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানায়নি। একইসাথে, ইসরায়েলও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
যুদ্ধবিরতির পটভূমি
মাত্র কয়েকদিন আগেই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষ হয়। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে গত মঙ্গলবার।
এই যুদ্ধের সময় ইরানের উচ্চপদস্থ ৬০ জন কর্মকর্তার মৃত্যু ঘটে, যাদের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশই আগ্রাসন বন্ধে সম্মত হয়েছিল। তবে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে চলেছে।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর?
ঘটনার পরপরই তেহরানের আকাশে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা পুরনো হলেও তা এখনো কার্যকর। বিশেষ করে রাজধানী অঞ্চল ও সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইরান নিয়মিত আপগ্রেড করে থাকে এই প্রযুক্তি।
তবে প্রশ্ন উঠছে — কিভাবে এত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও এমন বিস্ফোরণ ঘটলো? সেটি এখনো তদন্তাধীন।
জনমনে আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া
তেহরানজুড়ে সাধারণ মানুষ এখনো আতঙ্কিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন অনেকেই।
বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, মধ্যরাতে অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাইরে বের হয়ে আসেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পর এমন ঘটনা আবার সংঘাত উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে ইসরায়েল যদি এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ফের হুমকির মুখে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাফিজ জাফরি বলেন,
“এই বিস্ফোরণ যদি বাইরের কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে তা সরাসরি যুদ্ধবিরতির চুক্তির লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা ইরানকে আবারও সামরিক জবাব দিতে বাধ্য করতে পারে।”
আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক রেজা মোতামেদ বলেন,
“ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এখন আর সীমান্ত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই — এটি তথ্য, সাইবার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা যুদ্ধেও রূপ নিচ্ছে।”
আগামী দিনগুলোতে কী হতে পারে?
বর্তমানে ইরান সরকার পুরো ঘটনার তদন্ত করছে। যদি প্রমাণিত হয় যে এই বিস্ফোরণের পেছনে কোনো বিদেশি হাত রয়েছে, তাহলে ইরান যে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর এমন বিস্ফোরণ ভবিষ্যতে আবার বড় ধরনের সংঘাত ডেকে আনতে পারে — এমনটাই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সারসংক্ষেপ
যুদ্ধবিরতির মতো শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তেহরানে এমন বিস্ফোরণ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশকে আবারও অস্থির করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি শান্ত থাকবে নাকি আবার সংঘাত শুরু হবে — তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০০৮২, Signalbd.com