বিশ্ব

হিন্দুত্ব নেতা কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

যিনি ‘হিন্দুত্বের পোস্টার বয়’ হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় মহিলাটি অভিযোগ করেছেন, চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাঁকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার করা হয়েছে।

কার্তিক মহারাজ: বিজেপির ঘনিষ্ঠ ও পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী

গত কয়েক বছর ধরে বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির মুখপত্র এবং হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের প্রমুখ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘের এই সন্ন্যাসীকে পদ্মশ্রী পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিজেপির অনেক নেতা, যেমন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। সম্প্রতি মোদি-শাহের রাজনৈতিক সভায়ও উপস্থিত ছিলেন মহারাজ।

ধর্ষণ অভিযোগ: ‘চাকরি’ দিয়ে ফাঁদে ফেলার অভিযোগ

মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের এক নারী মহিলার পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ওই মহিলাকে স্কুলে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ, ওই স্কুলের আবাসনের পাঁচ তলায় তিনি থাকার সুযোগ পান। এরপর থেকেই কার্তিক মহারাজ মহিলার সঙ্গে দফায় দফায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

মহিলার অভিযোগ, চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং একবার গর্ভবতী হওয়ার পর তাঁকে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়। এই ঘটনার দিনক্ষণ জানানো হয় জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই শারীরিক নির্যাতন চলে।

নির্যাতিতা ১২ বছর পর মুখ খুললেন

এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার পরও বহু বছর চুপ থাকা ওই নারী সম্প্রতি সাহস করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ১২ বছর পর সত্যিকার বিচার পাওয়ার আশায় তিনি কন্ঠ তুলে ধরেছেন তাঁর কষ্টের কাহিনী। তাঁর অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে যে, স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজ তাঁর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির শিকার করেছেন।

পুলিশ তদন্ত শুরু, কার্তিক মহারাজের কোনো মন্তব্য নেই

মামলা দায়েরের পর মুর্শিদাবাদ নবগ্রাম থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে অন্যান্য সাক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে, এই অভিযোগের বিষয়ে কার্তিক মহারাজ এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তাঁর পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে?

বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির আধিপত্য গড়ার প্রচেষ্টার মাঝে এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় ধাক্কা হতে পারে। কার্তিক মহারাজের মতো একজন পরিচিত হিন্দুত্ববাদী নেতার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলে বিজেপির ইমেজে ধাক্কা লাগতে পারে।

শুভেন্দু অধিকারী ও অন্যান্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিবেচনায়, দলকে কী ধরনের অবস্থান নিতে হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, এ ধরনের ঘটনা সমাজে মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন তোলে।

সাম্প্রতিক হিংসা ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি

বাংলায় এবং দেশের অন্যান্য স্থানে সম্প্রতি হিংসা, সামাজিক দাঙ্গা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সরকার, সমাজসংস্থা ও নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। নারীর অধিকার রক্ষা ও তাঁদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিগত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রেক্ষাপট

  • ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও কার্তিক মহারাজ: ভারত সেবাশ্রম সংঘ একটি প্রাচীন হিন্দু সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান, যেখানে কার্তিক মহারাজের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
  • পদ্মশ্রী পুরস্কার: ভারত সরকার যে সম্মানজনক পুরস্কার দেয়, তার মধ্যে পদ্মশ্রী অন্যতম। কার্তিক মহারাজের এই পুরস্কার তাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।
  • বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদ: বিজেপি বর্তমান ভারতের শাসক দল হিসেবে হিন্দুত্ববাদ ও দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। কার্তিক মহারাজের মতো নেতারা দলের শীর্ষ পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম চালায়।
  • মুর্শিদাবাদ জেলার সামাজিক প্রেক্ষাপট: মুর্শিদাবাদ পূর্ব বর্ধমান ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি জেল। এখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা মাঝে মাঝে দেখা যায়।

ভবিষ্যৎ করণীয়

  • বিচার ব্যবস্থা: তদন্তে ত্রুটিহীনতা না রাখা এবং দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
  • রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: বিজেপি ও অন্যান্য দল যেন স্পষ্ট অবস্থান নেয়, নারীর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।
  • সচেতনতা ও শিক্ষামূলক কর্মসূচি: সমাজে নারী নির্যাতন রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
  • আইনি সহায়তা: নির্যাতিতা মহিলাদের জন্য সুরক্ষা, মানসিক সান্ত্বনা এবং আইনি সহায়তা জরুরি।

বাংলার রাজনীতিতে ‘হিন্দুত্বের পোস্টার বয়’ হিসাবে পরিচিত কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের খবর সমাজে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। দীর্ঘ ১২ বছর পর নির্যাতিতা মহিলার সাহসিকতা প্রশংসনীয়, তবে এ ধরনের অভিযোগের বিচার দ্রুত ও ন্যায্য হওয়া প্রয়োজন।

নারী অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় সকলের দায়িত্ব এবং রাজনীতিতে শুদ্ধাচার বজায় রাখা দেশের সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button