পাকিস্তানে শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিবারের ১১ জনের প্রাণহানি, ৯ মরদেহ উদ্ধার

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। বিপজ্জনক বন্যায় ভেসে যাওয়ার পর উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহ ৯টি উদ্ধার করেছে। এছাড়া চারজনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে অন্তত ৬ জন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
আকস্মিক বন্যায় পরিবারটির ভেসে যাওয়ার ভয়াবহ ঘটনা
গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের স্বাত নদীর তীরে পিকনিক করছিলো একটি পরিবার। নদীর ধারে আনন্দের মুহূর্ত উপভোগ করার সময় হঠাৎ করেই ভারী বর্ষণ ও পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এক শিশু নদীর ধারের পাড় থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং আকস্মিক বন্যার পানিতে ভেসে যায়। তাকে বাঁচাতে অভিভাবকরা পানিতে ঝাঁপ দেন। দুর্ভাগ্যবশত, শিশুসহ পরিবারের সবাই বন্যার পানিতে ভেসে যায়।
উদ্ধারকাজে নিযুক্ত ৮০ জন উদ্ধারকর্মী
ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার পানির প্রবাহের কারণে উদ্ধারকাজ জটিল হলেও এখনও পর্যন্ত ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ বাকি ব্যক্তিদের সন্ধান ও উদ্ধারকাজে কাজ করছে প্রায় ৮০ জন উদ্ধারকর্মী। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।
ভারী বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার কারণ
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ভারি বর্ষণের কারণে নদীর জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার পানিতে আকস্মিক ভেসে যাওয়ার এই ঘটনা মূলত এই ভারি বৃষ্টির ফলাফল। পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
শিশুসহ পরিবারের বিপর্যয়, প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সতর্কতা
মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু থাকা এই দুর্ঘটনাটি আরও হৃদয়বিদারক করেছে। এক মুহূর্তের অবহেলা ও আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একটি সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজকর্মীরা এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে পরবর্তী সময়ের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
সরকারি কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীরা সবাই একযোগে কাজ করছেন যেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করা যায় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশেষ করে নদীর ধারার কাছাকাছি পিকনিক বা ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যার ঘটনা বেশ বেড়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় নদীগুলো বিপজ্জনকভাবে ফুলে ওঠে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও পূর্বাঞ্চলের নদী অঞ্চলগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই বারবার মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।
২০১০ সালের ভয়াবহ পাকিস্তান বন্যার মতো বড় ধরনের দুর্যোগের স্মৃতি এখনও মাটি থেকে মুছে যায়নি। প্রতি বছরই এমন ছোট-বড় বন্যায় অনেক মানুষ বিপদে পড়ে। সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে।
স্থানীয় জনগণের সহায়তা ও মানবিক সেবা
স্থানীয় মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীরা এই সময় সবচেয়ে সামনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়। তারা উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায় ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেয়। এছাড়াও, বিভিন্ন মানবিক সংগঠন এই অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী ও জরুরি চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা
বন্যা প্রতিরোধের জন্য পাকিস্তান সরকার নদী ব্যবস্থাপনা, জলাধার নির্মাণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া, মৌসুমী পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নত করে জনসাধারণকে আগেভাগেই সতর্ক করার কাজ চলছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বন্যা সচেতনতা ও জরুরি কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।