বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৭৯ ফিলিস্তিনি আহত ৪০০

গাজার ওপর ইসরায়েলি বিমান ও মিসাইল হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৭৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মানবিক বিপর্যয় গভীর হচ্ছে গাজায়

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এবং কাতার ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতের মধ্যে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায়, যেখানে অসহায় মানুষ মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গাজার বিভিন্ন অংশে নতুন করে বিমান হামলা শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই। বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য গাজা এলাকায় আইডিএফ (ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স) অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আল শিফা হাসপাতাল ও একটি স্কুলকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ গাজায় শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা

দক্ষিণ গাজায় শরণার্থীদের তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে কমপক্ষে ৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। শরণার্থীদের জীবন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এই হামলা মানবিক বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক অভিযান: একটি দীর্ঘ সংগ্রাম

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজা সেক্টরে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে এই সংঘর্ষে প্রায় ৫৬,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবুও, আন্তর্জাতিক মহল থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল এই আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। নেটানিয়াহু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এই সংঘাতের অবসান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার উদ্বেগ

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ, এবং মানবাধিকার সংস্থা গাজার অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে এই হিংসা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্ব নেতারা পুনরায় যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবাধ পথের দাবিও জানিয়েছে।

গাজায় চিকিৎসা ও সহায়তার সংকট

নিরন্তর হামলার ফলে গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ওষুধ ও সরঞ্জামের অভাবে লড়াই করছে। বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অভাব, চলাচলের সীমাবদ্ধতা গাজার সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন করে তুলেছে। ত্রাণকর্মীরা বলছেন, অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সাহায্য পাঠানো না হলে মানবিক পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে উঠবে।

গাজার নাগরিকদের দিনযাপন: আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা

গাজার বাসিন্দারা প্রতিদিনের জীবনযাপন করছেন আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে। স্কুল, হাসপাতাল, বাজার সবকিছুই বোমাবর্ষণের ঝুঁকিতে। শিশুরা স্কুল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নারী ও প্রবীণরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরিবারগুলোকে তাদের ঘরছাড়া হতে হচ্ছে এবং বহু মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

গাজার সাম্প্রতিক অবস্থা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের কঠোর সামরিক নীতির সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সংঘাত অব্যাহত থাকায় এই সংকটের সমাধান এখনো দূরদর্শী নয়।

বিশ্বজনীন শান্তি ও স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে:

  • যুদ্ধবিরতির কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা
  • অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া
  • দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা

গাজা সংকট: বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের পাশে শক্তিশালী সমর্থন প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন নাগরিক সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, ও রাজনীতিকরা ইসরায়েলের হামলা বন্ধের জন্য প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের এই তীব্রতা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য এক বড় ধাক্কা। নিরীহ নারী ও শিশুদের আক্রান্ত হওয়া বিশ্বমানবিকতায় এক অপমান। দুনিয়ার সব সম্মিলিত উদ্যোগে গাজার গণমানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি শক্তিশালী করার এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button