খুব শিগগিরই গাজায় যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্প

নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন প্রায় চূড়ান্ত। তিনি বলছেন, “খুব শিগগিরই ভালো কিছু ঘটবে।” মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত মার্কিন দূতের সূত্রে এমন আশার কথা শোনালেন তিনি।
ট্রাম্প বললেন, ‘আমরা ভালো কিছুর কাছাকাছি’
নেদারল্যান্ডসের হেগে চলমান ন্যাটো সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমরা খুব শিগগিরই ভালো কিছু শুনতে যাচ্ছি।”
ট্রাম্প আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে এই বিষয়ে তার সাম্প্রতিক আলোচনায় তিনি আশাবাদী হয়েছেন। উইটকফ নাকি তাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া এখন ‘প্রায় সম্পন্ন’ পর্যায়ে রয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ছায়ায় গাজা
গত কয়েক সপ্তাহে ইরান ও ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কিছুটা সরে গিয়েছিল গাজার দিক থেকে। তবে সম্প্রতি সেই সংঘাত আংশিক থামার পর আবার আলোচনায় এসেছে গাজা উপত্যকা।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই সহিংসতার বড় একটি অংশই ছিল বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে রয়েছে বহু নারী ও শিশু।
যুদ্ধবিরতির আগাম সংকেত: মানবিক বিপর্যয়ে জরুরি পদক্ষেপ
ট্রাম্পের ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজার অবস্থা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আজকের দিনে (২৫ জুন) ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র। তাদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে, যেখানকার মানুষরা খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
এক সময় আন্তর্জাতিক মহলে এই ধরনের হামলা নিন্দার ঝড় তুললেও এখন এসব ঘটনা প্রায় ‘নিয়মিত বিষয়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবন বাঁচাতে গিয়ে খাদ্যের জন্য ঝুঁকি নেওয়া গাজার মানুষদের জন্য যুদ্ধবিরতি এখন কেবল শান্তি নয়, বেঁচে থাকার শেষ আশাও।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: গোপন চুক্তি ও কূটনৈতিক তৎপরতা
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় যুদ্ধবিরতির এই আশার পেছনে রয়েছে জটিল কূটনৈতিক আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপ এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইসরায়েলের চাপা আতঙ্ক, দুই পক্ষকেই এই মুহূর্তে যুদ্ধ থামাতে প্ররোচিত করছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, কাতার, মিশর ও তুরস্কও গোপনে এই আলোচনায় ভূমিকা রেখেছে। তবে এই আলোচনার বিস্তারিত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
পরমাণু ইস্যু ও আঞ্চলিক চাপ: অন্য এক যুদ্ধের সমাপ্তি?
ট্রাম্প শুধু গাজা নয়, ইরান প্রসঙ্গেও কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি হিরোশিমা বা নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না, কিন্তু বাস্তবে সেগুলো যুদ্ধের ইতি টেনেছিল – যেমনটা এবার ইরানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।”
তার দাবি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মার্কিন-ইসরায়েলি হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে। যার ফলে তেহরান যুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক সংঘাতের চাপ থেকে বের হয়ে আসার পথ তৈরি হতে পারে।
শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ?
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে, এটি হবে গাজার জন্য দীর্ঘদিন পর একটি স্বস্তির খবর। হাজারো আহত মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে, ত্রাণ সরবরাহ সহজ হবে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নতুন করে কাজ শুরু করতে পারবে।
তবে এর ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন, তার মেয়াদ ও শর্ত—সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো একপক্ষের অনমনীয়তা আবারও নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
আশার আলো, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত গাজার মানুষদের জন্য যেমন আশার আলো, তেমনি বৈশ্বিক রাজনীতির জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই যুদ্ধবিরতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? রাজনৈতিক চাপ ও সামরিক আগ্রাসনের ছায়ায় এই শান্তির উদ্যোগ কতটা টিকে থাকবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০০৫০, Signalbd.com