ইসরায়েলকে ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি: “ইরানে আর বোমা ফেলবা না”

ইরানের ওপর সম্ভাব্য বিমান হামলার আগেই ইসরায়েলকে সতর্ক করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাইলটদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়ে স্পষ্ট জানালেন—আর কোনো আগ্রাসন বরদাস্ত করা হবে না।
ইসরায়েলকে ট্রাম্পের কড়া বার্তা
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন নতুন মাত্রা নিচ্ছে, তখনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ইরানের বিরুদ্ধে আর কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নিতে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প সরাসরি বলেন—“ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। যদি তুমি এটা করো, তবে এটা হবে একটি বড় লঙ্ঘন। তোমার পাইলটদের এখনই বাড়িতে ফিরিয়ে আনো।”
এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ নয়, বরং শান্তি চায়।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই উত্তেজনার বিস্তার
সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও সংঘাত থামেনি। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ অভিযোগ করেন, ইরান যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইরানের সরকারি স্থাপনায় বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতির ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার পরপরই আসে ট্রাম্পের সতর্ক বার্তা, যা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন—আর কোনো আগ্রাসন গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইসরায়েলি উগ্রপন্থীদের হুমকি
ইসরায়েলের ডানপন্থি রাজনৈতিক নেতৃত্ব তেহরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করেছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “তেহরান কাঁপবে।” অন্যদিকে, আইডিএফ প্রধান জানিয়েছেন, “ইরানকে জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত।” এসব বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েলের ভেতরে এখনো যুদ্ধকেই সমাধান মনে করা হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সামাল দিতে চাইছে। ফলে ইসরায়েলের এই আগ্রাসী মনোভাব এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
ইরানের দাবি
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই নিহত হয়েছেন ১০৭ জন। আহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।
তেহরান দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির পর তারা কোনো হামলা চালায়নি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইসরায়েলই সংঘাত শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উদ্বেগ ও কূটনীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা এখন কূটনৈতিক সমাধানের দিকে যেতে চাইছে। ট্রাম্পের এমন প্রকাশ্য সতর্ক বার্তা সম্ভবত তেল ও নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
এই সতর্কবার্তা এমন সময় এল, যখন ওয়াশিংটনের একাধিক সহযোগী দেশও যুদ্ধের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মত: “দুই পক্ষকেই পিছু হটতে হবে”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. আমানুল্লাহ খান মনে করেন, “এই পরিস্থিতি এখন এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। দুই পক্ষই যদি উত্তেজনা না কমায়, তাহলে এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই অনিরাপদ করে তুলবে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি কৌশলগত হলেও, ইসরায়েল তা মানবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।”
আরও এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. রেহনুমা হাসান বলছেন, “ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই বার্তা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের সব পক্ষের জন্যও এক ধরনের সতর্ক সংকেত।”
“ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। যদি তুমি এটা করো, তবে এটা হবে একটি বড় লঙ্ঘন। তোমার পাইলটদের এখনই বাড়িতে ফিরিয়ে আনো।”
— ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্র
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
এই মুহূর্তে ইসরায়েল ট্রাম্পের সতর্কবার্তা কিভাবে নেয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেশটি আগ্রাসন থেকে পিছু হটে, তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুলে যেতে পারে। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে ইসরায়েলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের ওপর।
এম আর এম – ০০৩১, Signalbd.com