ইসরাইল এখন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, আমি আর নিতে পারছিনা: ট্রাম্প

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির পরও হামলা চালানোয় কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। সতর্ক করেছেন, এখনই পাইলটদের ফিরিয়ে না নিলে যুদ্ধবিরতির গুরুতর লঙ্ঘন হবে।
ট্রাম্পের বক্তব্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরাইল এখন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, এবং তিনি এই পরিস্থিতি আর মেনে নিতে পারছেন না। ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমার ধারণা নির্ধারিত সময়ের পরে একটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরাইল এখন নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের এখন শান্ত হওয়া উচিত।”
ট্রাম্প স্পষ্ট জানান, তিনি গতকাল এমন অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করেছেন যা একেবারেই তাঁর পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের আচরণে তিনি চরম অসন্তুষ্ট।
যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
মাত্র একদিন আগেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। উভয় দেশই সম্মত হয় যে কেউই প্রথমে আক্রমণ করবে না। কিন্তু তারপরেই ইসরায়েলের একতরফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠে, যা ট্রাম্পের মতে, চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির চুক্তি করার পরপরই ইসরাইল যা করেছে, তা একেবারেই অনুচিত। তাদের (ক্ষেপণাস্ত্র) নিক্ষেপ করা উচিত হয়নি।”
এই অবস্থায় ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের বার্তা
ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ একটি বার্তা পোস্ট করে বলেন,
“ইসরায়েল, ইরানে আর বোমা ফেল না। এটি করলে যুদ্ধবিরতির চরম লঙ্ঘন হবে। তোমাদের পাইলটদের এখনই ফিরিয়ে নিয়ে এসো।”
এই বার্তাটি কেবল ইসরায়েলকেই নয়, পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও একটি শক্ত বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। ট্রাম্প পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান এবং যুদ্ধের পক্ষে নন।
ইরান ও ইসরায়েল: দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক বহুদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি ও গোপন হামলার অভিযোগে একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে উভয় দেশ।
এই দ্বন্দ্বের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এবার ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে শান্তির বার্তা দেওয়ায় কূটনৈতিকভাবে সেটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: ইসরায়েলকে ‘বিকল্প পথ’ খুঁজতে হবে
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আনোয়ার হোসেন মনে করেন, “ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং একটি কূটনৈতিক হুঁশিয়ারিও। ইসরায়েলকে যদি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ধরে রাখতে হয়, তাহলে এখনই তাদের কৌশল পাল্টাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে কেউই বিশ্বজনমত পাবে না। বরং এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথই হবে ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের জন্য উত্তম।”
“ইসরায়েল, ইরানে আর বোমা ফেল না। এটি করলে যুদ্ধবিরতির চরম লঙ্ঘন হবে”—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পরিণতি কী হতে পারে?
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রক্রিয়ার সম্ভাবনাকে আবারও সামনে আনতে পারে। তবে ইসরায়েল যদি এই সতর্কতা উপেক্ষা করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির পথে এই ঘটনাগুলো বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ইসরায়েল কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং পরবর্তী পদক্ষেপে কোন পথে হাঁটে তারা।
এম আর এম – ০০২৭ , Signalbd.com