বিশ্ব

কাতারে থাকা মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে থাকতে বললো যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে কাতারে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে দোহায় মার্কিন দূতাবাস। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে দোহায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। দূতাবাসের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের দোহা দূতাবাস থেকে প্রেরিত এক ইমেইল বার্তায় কাতারে থাকা সকল মার্কিন নাগরিককে জানানো হয়েছে—‘সতর্কতার অংশ হিসেবে’ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে এই সতর্কবার্তার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের নিয়মিত আপডেট পেতে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংবাদমাধ্যমের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আবহ

এই সতর্কতা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক অভিযানের পরে তেহরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনার রেশ কেবল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং উপসাগরীয় অঞ্চলে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কাতারসহ অন্যান্য দেশের ঘাঁটিতে থাকা সৈন্য ও সরঞ্জাম পুনর্বিন্যাস করছে।

কাতারে আল-উদেইদ ঘাঁটির গুরুত্ব

কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলোর একটি। এখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

এই ঘাঁটিতে নিয়মিত সি-১৭ পরিবহন বিমান, এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ড্রোন কার্যক্রম চালায়। সম্প্রতি ঘাঁটিটি থেকে বহু উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সাময়িকভাবে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পদক্ষেপ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, কাতার ছাড়াও বাহরাইনে অবস্থিত ৫ম নৌবহরের ঘাঁটি থেকেও সামরিক রিসোর্স স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে।

তারা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ মূলত ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবেলার অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে, যদিও কোন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।

কাতার সরকারের অবস্থান

এই বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাতারে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। কাতার সরকারের একজন মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী বলেন, বিভিন্ন দূতাবাসের সতর্কতা ‘সাধারণ সতর্কতা’র অংশ, যা নির্দিষ্ট কোনো হুমকির প্রতিফলন নয়।

তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, কাতার সরকার তার ভূখণ্ডে থাকা সকল বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।

কী বলছেন বিশ্লেষকরা?

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

বিশ্লেষক ড. সামির হাসান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক ঘাঁটি নিরাপদে রাখতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। তবে এই সতর্কবার্তা কাতারের মতো শান্তিপূর্ণ দেশে অস্থিরতা ছড়াতে পারে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি

পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্কিন দূতাবাসের এমন বার্তা সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আরও কঠোর কৌশল হাতে নিতে পারে।

“সতর্কতার অংশ হিসেবে নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে”—যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, কাতার

সার-সংক্ষেপ 

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এমন সতর্কবার্তা সাধারণত বিরল নয়, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

কাতারের মতো দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে—সেখানে উত্তেজনার আভাস অনেক বড় সংকেত হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সতর্কতা শুধু কাতার নয়, পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতির দিকনির্দেশক হতে পারে।

এম আর এম – ০০১৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button