বিশ্ব

৭২৮ ড্রোন হামলা ইউক্রেনে: রাশিয়ার নতুন কৌশল

Advertisement

ইউক্রেন সংকটে রাশিয়া-আমেরিকার টানাপোড়েন আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মাত্র এক রাতেই রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে একত্রে ৭২৮টি ড্রোন হামলা চালায়। এ হামলা ঘটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনে নতুন অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার ঠিক পরের রাতে।

ড্রোন হামলার ভয়াবহতা: রাতারাতি আকাশে রাশিয়ার আক্রমণ

২০২৫ সালের ৮ জুলাই রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ব্যাপক আকাশ হামলা চালায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় ব্যবহৃত হয় ৭২৮টি ড্রোন, যা সাম্প্রতিক ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের ইতিহাসে এক গভীর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা অধিকাংশ ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে, তবুও ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ট্রাম্পের অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা: উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক দিন আগে ঘোষণা করেন, তারা ইউক্রেনে নতুন অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “ইউক্রেন অনেক তীব্র আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে, তাই তাদেরকে আরও শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে হবে।” এর আগে মার্কিন সামরিক মজুদ কমে যাওয়ার কারণে অস্ত্র সরবরাহ সাময়িক বন্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আবার শুরু হয়েছে।

পেন্টাগনের ক্ষমতা পর্যালোচনা ও অস্ত্র সরবরাহ পুনর্বার

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ জানিয়েছে, অস্ত্র সরবরাহ সাময়িক বন্ধের পেছনে ছিল তাদের ক্ষমতা পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণা এবং বিশ্ব পরিস্থিতির চাপের কারণে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইউক্রেনে এখন শুধু ড্রোন নয়, রাশিয়ার বড় বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও ব্যাপকতর আকারে চলছে, যা সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা: সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি ও ভূপাতিত ড্রোন

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বলেন, “আমাদের সামরিক বাহিনী অধিকাংশ ড্রোন ভূপাতিত করেছে, তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিছু ক্ষতি হয়েছে।” তিনি ইউক্রেনের টেলিভিশনে বলেন, “রাশিয়া আমাদের ওপর নানান ধরনের আক্রমণ চালাচ্ছে, কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করছি।”

ট্রাম্পের পুতিন নিয়ে কঠোর মন্তব্য: নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউসে এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি বলেন, “পুতিনের প্রতি আমার খুশি নেই, তিনি অনেক মিথ্যা কথা বলেন। যদিও মাঝে মাঝে আন্তরিক মনে হতে পারেন, দিনের শেষে তার কথাগুলো অর্থহীন।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “পুতিন হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন, যার মধ্যে তার নিজের সেনা এবং ইউক্রেনের সেনাও রয়েছে।” তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মার্কিন সিনেট একটি বিল প্রস্তাব করেছে, যা তিনি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন। তবে ভবিষ্যতে এই বিষয়ে বিস্তারিত পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তিনি।

ইউক্রেন সংকটের পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ভূখণ্ড দখলের পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্ক অবনতির মুখে। ২০২২ সালের পর এই সংঘাত প্রকৃত যুদ্ধে পরিণত হয়। রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমশ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতিরোধে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, এবং ন্যাটো দেশগুলো সমর্থন প্রদান করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অস্ত্র সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় ইউক্রেনের অবস্থান কিছুটা নাজুক হয়েছিল।

ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার ও সামরিক কৌশল

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ড্রোন দিয়ে আকাশ থেকে নজরদারি, হামলা, এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ক্ষমতা যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। রাশিয়া বিশেষভাবে বৃহৎ সংখ্যক কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেনের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে। ইউক্রেনও তাদের প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল উন্নত করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই অবস্থা বিশ্বরাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবুও সংঘাত স্থগিত হয়নি। সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা ও অস্ত্র সরবরাহ পুনরায় শুরু হওয়ায় যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক কোনো সমাধান ছাড়া সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইউক্রেনের স্থিতি শক্তিশালী করতে পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা অপরিহার্য, আর রাশিয়া তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠছে।

ট্রাম্পের নতুন অস্ত্র সরবরাহ ঘোষণা এবং তার সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়ার ৭২৮ ড্রোন হামলা ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন ধাপে প্রবেশের ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউক্রেনের সামরিক প্রতিরোধ, মার্কিন পেন্টাগনের কৌশলগত পরিকল্পনা, এবং রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে বিশ্ব এখন কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে। এই সংকটের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য ও কূটনৈতিক উদ্যোগের ওপর।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button