বিশ্ব

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার ঘটনা নিশ্চিত করলো তেহরান

ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় – ফোরডো, নাতানজ ও ইসফাহানে বিমান হামলার তথ্য সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। রোববার (২২ জুন) দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাতে এই খবর জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইরান সরকারের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে, হামলার ফলে এসব পারমাণবিক কেন্দ্রের নির্দিষ্ট কিছু অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার দাবি

কোম প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখপাত্র মোর্তেজা হায়দারি জানান, ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েক ঘণ্টা আগে কোম প্রদেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত্রুর বিমান আক্রমণের উপস্থিতি শনাক্ত করে। এর কিছু সময় পর ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনের নির্দিষ্ট অংশে হামলা চালানো হয়। এতে স্থাপনার পরিকাঠামোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাতানজ ও ইসফাহানেও বিস্ফোরণের ঘটনা

ইসফাহানের নিরাপত্তা উপ-গভর্নর আকবর সালেহি জানান, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। উভয় কেন্দ্রে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হয়েছে। তবে হামলার বিস্তারিত পরিমাণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা স্পষ্ট নয়

তেহরান সরকার এখনও স্পষ্টভাবে জানায়নি, হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে কি না। তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই হামলার অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ ও ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই হামলার সত্যতা নির্ধারণ করা হবে বলে বলা হয়েছে।

ট্রাম্পের টুইট: যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার দাবি

এদিকে, রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টার দিকে, আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের ফোরডো, নাতানজ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা ফোরডো পারমাণবিক কেন্দ্রের মূল অংশে সম্পূর্ণ হামলা সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে সব বিমান নিরাপদে নিজেদের আকাশসীমার বাইরে চলে গেছে।”

ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, “বিশ্বের অন্য কোনো সামরিক বাহিনী এমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আমেরিকান যোদ্ধাদের অভিনন্দন। এখন শান্তির সময়।”

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

গত বৃহস্পতিবারই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র কতটা যুক্ত হবে তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মার্কিন হামলার দাবি তুলে এই উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি

ইরান এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এ হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”

আন্তর্জাতিকভাবে এই ঘটনার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক দেশগুলো সাধারণত এই হামলার পক্ষে মত প্রকাশ করেছে, তবে অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা সংঘটিত হলে তা বৃহত্তর সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনায় সন্ত্রাসী হামলা বা সামরিক আক্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য।

বিশ্বের নানা দেশে পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্ন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এসব স্থাপনায় হামলার ঝুঁকি বেশি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছে।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক উত্তেজনা: ইতিহাস

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক বিষয়ক উত্তেজনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৮ সালে সরে আসার পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বহু বছর ধরেই সন্দেহ পোষণ করছে, যা কখনো কখনো সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার প্রভাব শুধু ওই অঞ্চলে নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক পরিমাণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এখন সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির বার্তা প্রচার এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে তৎপর হওয়ার।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button