বিশ্ব

ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলা: নিহত ৪৩০, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত

ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের সরাসরি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছিল বলেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। তেহরান অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করেছে।

ঘটনার বিবরণ

শনিবার সকালে ইরানের ইস্পাহান প্রদেশে একাধিক স্থানে ইসরায়েল ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘ফারস নিউজ এজেন্সি’ জানায়, ইস্পাহানের লেনজান, মোবারাকে এবং শাহরেজা এলাকায় আঘাত হানার পাশাপাশি ইসরায়েল তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাতেও হামলা চালায়।

এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল পরমাণু স্থাপনাগুলোকেই ধ্বংস করা। ইস্পাহানের সহকারী গভর্নর আকবর সালেহি জানান, ইসরায়েল তাদের আকাশপথ ব্যবহার করে দ্রুত ও নিখুঁতভাবে হামলা চালায়। তবে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আংশিকভাবে হামলাটি প্রতিহত করে।

পরমাণু স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা

হামলার পর ইরানের স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পরমাণু স্থাপনাগুলো এখনো অক্ষত রয়েছে এবং সেখানে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আনাদোলু সংবাদ সংস্থার বরাতে বলা হয়েছে, এ হামলায় ইস্পাহানের পরমাণু স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে সামগ্রিকভাবে এই হামলায় দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। বেশ কয়েকটি জায়গায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে।

সামরিক লক্ষ্যে ইসরায়েলের আঘাত

আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের ফারস প্রদেশেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে, যেখানে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু ছিল। যদিও এসব হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানায় আইএসএনএ (ISNA), ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা।

এর আগে ১৩ জুন তেহরানসহ কয়েকটি শহরে একইভাবে ইসরায়েল হামলা চালায়, যাতে ইরানের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানী নিহত হন। এই ঘটনাগুলোই দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুই দেশের পাল্টা বিবৃতি

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘নূর নিউজ’ জানায়, সাম্প্রতিক হামলাগুলোর ফলে এখন পর্যন্ত ৪৩০ জন নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলায় তাদের ২৫ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

তেল আবিব সরকারের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপে পৌঁছে যাওয়ায় তাদের এ ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। তারা একে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

অন্যদিকে ইরান এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। ইরান বারবার বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না এবং কখনোই সেই পথে যাবে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

এ হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব জ্বালানি বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। অপরিশোধিত তেলের দাম একদিনেই প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।

উপস্থিত কর্মকর্তারা (প্রাসঙ্গিক হলে)

এই হামলার পর ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি বৈঠক ডেকেছে। সেখানে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা আসতিয়ানী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান।

এম আর এম-০০০১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button