
বিশ্ব আজ গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান মানবিক সংকটের সাক্ষী। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেখানকার সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশুদের ওপর নির্মম গণহত্যার। বোমাবর্ষণ ও ত্রাণকেন্দ্রে অসহায় মানুষের ওপর নৃশংসতার খবর পৌঁছেছে সারাবিশ্বে। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে, অধিকাংশ মুসলিম দেশ বা পশ্চিমা শক্তি গাজার প্রতি তাদের ভূমিকা নিয়ে নিরব থাকলেও, দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ইসরায়েলকে গণহত্যাকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বললেন, ইসরায়েলে আর কোনো কয়লা রফতানি করা হবে না। তাঁর মতে, ইসরায়েল যতদিন গাজার নিরীহ মানুষদের ওপর বোমা নিক্ষেপ চালাবে এবং মানুষ হত্যা করবে, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
গাজার মানবিক সংকট: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সমালোচনা বাড়ছে
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার শিশু ও সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় অনাহার ও দুর্ভিক্ষের শিকার হচ্ছেন হাজারো নিরীহ মানুষ। ত্রাণকেন্দ্র ও আশ্রয়স্থলে হামলা চালিয়ে অসহায় মানুষের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর মনে শোক ও বিরক্তি সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা শক্তিগুলো যদিও কিছু সময় ছোটখাটো নিন্দা করেছে, তবে সেসব পদক্ষেপ বাস্তবতার মোকাবেলায় খুবই দুর্বল। অপরদিকে, মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশও এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেনি।
কলম্বিয়ার কঠোর পদক্ষেপ: কয়লা রফতানি বন্ধের ঘোষণা
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া গাজার গণহত্যা নিয়ে একেবারেই নীরব থাকেনি। প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “আমি কলম্বিয়ার সকল নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদেরকে নির্দেশ দিয়েছি, ইসরায়েলে কোনো কয়লা পাঠানো হবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা গণহত্যার অংশীদার হতে চাই না।”
প্রায় এক বছর আগে কলম্বিয়া সরকার ইসরায়েলে কয়লা রফতানি বন্ধের সরকারি নির্দেশনা জারি করেছিল। কিন্তু কিছু সরকারি কর্মকর্তা এই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে কয়লা রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পেত্রো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কলম্বিয়ার কয়লা খাতের ওপর প্রভাব
কলম্বিয়ার অর্থনীতি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে কয়লা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইসরায়েল তার কয়লা চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ কলম্বিয়া থেকে আমদানি করে। তাই এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির কয়লা খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম কয়লা কোম্পানিগুলো এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে রয়েছে।
তবু, মানবাধিকারের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কলম্বিয়ার জাতীয় স্বার্থ ও নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
বিশ্ব রাজনীতিতে কলম্বিয়ার অবস্থান
কলম্বিয়ার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে। গাজায় চলমান বর্বরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একমাত্র শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও শান্তি সমর্থকরা। এটি একটি সংকেত, যা বিশ্বকে জোরালো করে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রতিবাদে সারা বিশ্বের দেশগুলোকে সামিল হতে হবে।
গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে মানবতার মর্মান্তিক অবস্থা। কিন্তু বিশ্বজনীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কলম্বিয়া যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অন্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত মানবাধিকারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে এবং ইসরায়েলের অবিলম্বে বর্বরতা বন্ধ করার আহ্বান জানায়।
কলম্বিয়ার কয়লা রফতানি বন্ধের এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে মানবাধিকারের গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরেছে। আশা করা যায়, এই ধরনের পদক্ষেপ গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই পথে হাঁটবে।