বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৬৩৯, আহত ১৩২০

ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ‘রাইজিং লাইন’-এ ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৯ জনে। আহতের সংখ্যা ১৩২০ ছাড়িয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস, যা মূলত ওয়াশিংটনে অবস্থিত।

২০২৫ সালের ১৮ জুন বুধবার এই তথ্য তারা প্রকাশ করেন এবং পরের দিন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা প্রতিবেদনটি বিস্তারিত তুলে ধরে।

নিহত ও আহতের মধ্যে বিশ্লেষণ

সংস্থার তথ্যে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে মারা গেছেন ১৫৪ জন। বাকিদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

স্থানীয় গণমাধ্যম ও নিজস্ব নেটওয়ার্কের তথ্যভাণ্ডার

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস জানিয়েছে, এই হতাহতের সংখ্যা ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও নিজস্ব অনুসন্ধান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। তবে ইরান সরকার এখনো সরকারি পর্যায়ে এই তথ্য প্রকাশ করেনি।

সংঘর্ষের পটভূমি ও পরিস্থিতি

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল সাত দিন ধরে। এর মধ্যে তেহরান থেকে পরিসংখ্যান নিয়মিত পাওয়া না গেলেও, সর্বশেষ তারা জানিয়েছিল ২২৪ জন নিহত এবং ১,২৭৭ জন আহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুমোদন

এই পরিস্থিতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ন তথ্য এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভাব্য সামরিক হামলার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন ইরানের বিরুদ্ধে। যদিও এখনো চূড়ান্ত কোনো নির্দেশ দেননি তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টাদের বরাতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তবে তেহরানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, তাই কিছুটা সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

ইরানের সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্য

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আঘাতের লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত, যা ধ্বংস করতে গেলে অত্যন্ত শক্তিশালী বোমার প্রয়োজন হবে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সংকট

বিশ্বের অন্যতম উত্তপ্ত অঞ্চলে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক এই সামরিক সংঘর্ষে বড় মাত্রায় প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

বেসামরিক জনগণের ওপর আঘাত

আহত ও নিহতদের বিশাল অংশ বেসামরিক নাগরিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বহু পরিবারের ঘর ভেঙে, অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এমনকি শিশু ও বৃদ্ধরাও এর মধ্যে রয়েছেন।

সামরিক বাহিনীর হানাহানি

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এই সংঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়ায় সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের লড়াই চলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনীতি

এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ ইসরায়েল ও ইরানের প্রতি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত যেকোনো মুহূর্তে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলবে।

মানবিক সংকট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

এখন পর্যন্ত সংঘর্ষের কারণে ৬০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু এবং হাজারের বেশি আহত হওয়ায় ইরানে মানবিক সংকটের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।

চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের অভাব

আহতদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। হাসপাতালগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে। অনেক স্থানেই ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আশ্রয়হীন ও স্থানচ্যুত মানুষ

সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করে শরণার্থী হয়েছে। বিশেষত বেসামরিক অঞ্চলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের বর্তমান পরিস্থিতি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মৃত ও আহতের সংখ্যার ক্রমবর্ধমানতা আন্তর্জাতিক মহলকে সতর্ক করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পরাশক্তি এই সংকটের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সামরিক পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বন্ধ না হলে, এ সংঘর্ষ আরও বড় আকার ধারণ করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button