আবহাওয়া

আগামী তিন দিন দেশে কমবে দিন-রাতের তাপমাত্রা

Advertisement

বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ধীরে ধীরে শীতের আগমন ঘটছে। নভেম্বরের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সকাল ও রাতে শীতের আমেজ দেখা যাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী তিন দিন টানা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কিছু এলাকায় ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানান, “বর্তমানে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাতাসে আর্দ্রতা কিছুটা কমে গেছে, ফলে রাতের দিকে ঠান্ডা অনুভূতি বাড়বে।”

দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমবে

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিন টানা তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে
বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল—রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলে শীতের প্রভাব তুলনামূলক বেশি অনুভূত হতে পারে।

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এখনো দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও, রাতের দিকে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সকালে কুয়াশা এবং হালকা শিশির পড়তে দেখা যাচ্ছে।

আবহাওয়ার সার্বিক চিত্র

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,

  • সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, তবে সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
  • মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) একই ধরনের আবহাওয়া বজায় থাকবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে।
  • বুধবার (১২ নভেম্বর) সারা দেশে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
  • বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে, তবে ভোরবেলায় কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্তই বাংলাদেশের আবহাওয়ার পরিবর্তনের সবচেয়ে স্পষ্ট সময়। এসময় মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বিদায় নেয় এবং উত্তর দিক থেকে শুষ্ক ও ঠান্ডা বায়ু দক্ষিণে নেমে আসে।

শীতের আগমন: প্রকৃতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত

দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নীলফামারী, কুড়িগ্রামসহ পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে রাতের বেলায় তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে।
ফলে সকালবেলা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে গ্রামের প্রান্তর, নদী ও ফসলের মাঠ।

কৃষকরা বলছেন, মাঠে এখন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর মৌসুম চলছে। হালকা ঠান্ডা বাতাসে ধান দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে, যা কৃষিকাজের জন্য সুবিধাজনক। তবে তীব্র ঠান্ডা পড়লে শ্রমিকদের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকায় শুষ্ক আবহাওয়া, তাপমাত্রা কমলেও থাকবে সহনীয় ঠান্ডা

রাজধানী ঢাকায় এখনো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কিছুটা বেশি। দিনভর রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর হালকা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
তবে এখনও রাজধানীতে তীব্র শীতের অনুভূতি আসেনি—এটি মূলত নভেম্বরের শেষ ভাগে এসে আরও বাড়বে।

বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক আবহাওয়া চলায় ধুলাবালির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে যাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে।

পরবর্তী পাঁচ দিনের পূর্বাভাস

আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কিছুটা বাড়তে পারে। অর্থাৎ ১৩ নভেম্বরের পর দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাবে, তবে রাতের তাপমাত্রা কম থাকবে।
এটি বাংলাদেশের শীত মৌসুমের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য—দিনে সূর্যের তাপ তুলনামূলক বেশি, কিন্তু রাতে শুষ্ক ঠান্ডা বাতাস তাপমাত্রা হ্রাস করে।

কুয়াশার প্রভাব ও সতর্কতা

শীতের শুরুতে সাধারণত ভোরের দিকে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা দেখা দেয়।
বিশেষ করে নদীবেষ্টিত অঞ্চল—ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, শ্রীমঙ্গল, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে কুয়াশার ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে—

  • ভোরে ও রাতে যাত্রাকারীদের সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে মহাসড়কে চলাচলকারীদের জন্য।
  • নৌযান চালকরা ভোরবেলায় চলাচলের সময় দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তা মানতে হবে।
  • কৃষকদের ফসলের ক্ষতি রোধে ফসল ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যাতে শিশিরের কারণে কোনো ক্ষতি না হয়।

শীতের প্রভাব কৃষি ও জনজীবনে

বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য শীত একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। রবি ফসলের চাষ এখন পুরোদমে চলছে। গম, সরিষা, আলু, মসুর, ছোলা ইত্যাদি ফসলের বীজ রোপণের উপযুক্ত সময় এখন।
শীতের হালকা আবহাওয়া এসব ফসলের জন্য অনুকূল হলেও অতিরিক্ত ঠান্ডা বা কুয়াশা পড়লে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা ও শিশিরের কারণে আলু ও সবজির জমিতে পচনধরার ঝুঁকি বাড়ে। তাই কৃষকদের নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ ও সেচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও করণীয়

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগ যেমন—সর্দি, কাশি, ফ্লু ও হাঁপানির প্রকোপও বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুর আর্দ্রতা কমে গেলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়ে, তাই শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

  • শীতের সকালে বা রাতে বাইরে বের হলে গরম কাপড় পরুন
  • হালকা গরম পানি পান করুন
  • কুয়াশায় ভেজা অবস্থায় বেশি সময় থাকবেন না
  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ফলমূল ও সবজি খান

প্রকৃতিতে শীতের ছোঁয়া

দেশজুড়ে প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শহরাঞ্চলে সকালবেলায় শিশিরভেজা ঘাস, গ্রামাঞ্চলে খেজুরগাছের রসের হাঁড়ি ঝোলানো, হালকা কুয়াশায় মোড়া পথ—সব মিলিয়ে প্রকৃতি সাজছে নতুন রূপে।
বাংলাদেশের এই সময়টি পর্যটনেরও অনুকূল মৌসুম। কক্সবাজার, সাজেক, সেন্টমার্টিন, সিলেটের চা-বাগান, সুন্দরবন—সব জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় এখনই।

আবহাওয়াবিদদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মৌসুমি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শীত মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম থাকবে।
বিশেষ করে জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

তবে এবার দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টিপাত বা ঘন কুয়াশার প্রবণতা কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে শীত এখনো পুরোপুরি নামেনি, তবে তার উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে সর্বত্র।
আগামী তিন দিনে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে শীতের জন্য।
প্রকৃতি, কৃষি, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রা—সব ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আনবে নতুন রঙ ও ছন্দ।

MAH – 13707 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button