আবহাওয়া

ধেঁয়ে আসছে বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার টাইফুন রাগাসা

Advertisement

বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার টাইফুন “রাগাসা” দ্রুত হংকং ও চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ইতোমধ্যে এটি ফিলিপাইনে ভয়াবহ আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই রাগাসা আরও শক্তি নিয়ে হংকং ও গুয়াংডং উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

হংকং সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং স্থানীয় জনগণকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বিপদ এড়াতে হাজার হাজার মানুষকে ইতোমধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাগাসার শক্তি ও অবস্থান

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, সুপার টাইফুন রাগাসার বাতাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। এর সাথে প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও টানা ভারী বর্ষণ যুক্ত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

হংকং অবজারভেটরির সর্বশেষ আপডেটে বলা হয়েছে, টাইফুনটি বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থান করছে এবং বুধবার রাতের মধ্যেই গুয়াংডং প্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। ঝড়টি হংকংয়ের দিকেও তীব্র আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রস্তুতিতে হংকং ও চীনের উপকূলীয় অঞ্চল

রাগাসার প্রভাবে হংকংয়ে বিমান চলাচল, নৌপরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ৭০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

চীনের গুয়াংডং প্রদেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ মানুষের আতঙ্ক ও করণীয়

সুপার টাইফুনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই সুপারশপ ও মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও গৃহস্থালি সামগ্রী মজুদ করছেন। এর ফলে বাজারগুলোতে ভিড় বেড়ে গেছে এবং অনেক শেলফ খালি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া অনেক পরিবার তাদের ঘরের জানালায় টেপ লাগিয়ে শক্ত করে রেখেছেন, যাতে বাতাসের আঘাতে কাঁচ ভেঙে না যায়। বয়স্ক ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ফিলিপাইনে রাগাসার প্রভাব

এর আগে গত সোমবার রাগাসা ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির কারণে সেখানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফিলিপাইনে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।

ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে হংকং ও চীনের উপকূলীয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও বাণিজ্যিক ক্ষতি

হংকং ও গুয়াংডং এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সেখানে বন্দর কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কয়েক দিনের জন্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে।

এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায়ও প্রভাব পড়তে পারে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক ঝড়গুলো আরও তীব্র ও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাগাসা তারই একটি উদাহরণ।

একজন আবহাওয়াবিদ বলেন, “রাগাসার মতো সুপার টাইফুন বছরে এক বা দুইবার হলেও দেখা যায়। এ ধরনের ঝড় কেবল একটি দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।”

তিনি আরও জানান, হংকং ও দক্ষিণ চীনে প্রচণ্ড বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

সুপার টাইফুন রাগাসা এখন দক্ষিণ চীন সাগরে তাণ্ডব চালাচ্ছে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হংকং ও গুয়াংডং উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়টি ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব প্রস্তুতির পরও কতটা ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী টাইফুনের মুখোমুখি হতে পারে এই অঞ্চল।

এম আর এম – ১৪৮২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button