একসঙ্গে ধেয়ে আসছে জোড়া হারিকেন

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দিকে একসঙ্গে ধেয়ে আসছে দুটি ভয়ঙ্কর হারিকেন। চলতি সপ্তাহেই এ দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
হারিকেন কিকো ও লোরেনা: দুটি ঝড়ের নাম
মায়ামিভিত্তিক ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের তথ্যে জানা গেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া দুটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে হারিকেন কিকো ও হারিকেন লোরেনা।
হারিকেন কিকো বর্তমানে ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে সক্রিয়। এর কেন্দ্রে বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১৫ কিলোমিটার। কিকো এখন হাওয়াইয়ের হিলো থেকে প্রায় ২ হাজার ৫৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এবং ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে।
অন্যদিকে হারিকেন লোরেনা ক্যাটাগরি-১ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে অবস্থান করছে। এটির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার এবং মেক্সিকোর কাবো সান লুকাস থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
কী হতে পারে আগামী দিনে
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কিকো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তবে এর পর ধীরে ধীরে তীব্রতা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। লোরেনার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এটি উপকূলে পৌঁছালে ভারি বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কা তৈরি করবে।
বিশেষ করে বাজা ক্যালিফোর্নিয়া উপদ্বীপ এবং উত্তর-পশ্চিম মেক্সিকোর মানুষকে প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
হারিকেন কেন এত ভয়ঙ্কর
হারিকেন হলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, যা মূলত আটলান্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চল ও মেক্সিকো উপসাগরে সৃষ্টি হয়। এতে তীব্র বৃষ্টি, প্রচণ্ড বাতাস এবং জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। সাধারণত এ ধরনের ঝড় উপকূলে আঘাত করলে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়।
হারিকেনের শক্তি নির্ধারণ করা হয় সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, যা ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫ পর্যন্ত বিভক্ত। ক্যাটাগরি যত বেশি হয়, ঝড়ের তীব্রতাও তত ভয়াবহ হয়।
অতীতের নজির
গত কয়েক দশকে একাধিক ভয়ঙ্কর হারিকেন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে এনেছে।
- হারিকেন ক্যাটরিনা (২০০৫): যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি, যাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
- হারিকেন হার্ভে (২০১৭): টেক্সাসে প্রচণ্ড বন্যা সৃষ্টি করেছিল।
- হারিকেন প্যাট্রিসিয়া (২০১৫): মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাগুলোকে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি হারিকেন একসঙ্গে ধেয়ে আসা বিরল ঘটনা হলেও এটি একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে।
ক্লাইমেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের এক গবেষকের মতে, “সমুদ্রের উষ্ণতা যত বাড়ছে, হারিকেন তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে। ফলে একটি অঞ্চলে একসঙ্গে একাধিক ঝড়ের সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।”
ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ও প্রস্তুতি
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেক্সিকোর উপকূলে ইতিমধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। উপকূলবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুত বাড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও ফ্লোরিডাতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জরুরি বিভাগগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে স্কুল ও অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক উদ্বেগ
হারিকেন কেবল আক্রান্ত দেশগুলোতেই ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে না, বরং এর অর্থনৈতিক প্রভাব বৈশ্বিক বাজারেও পড়ে। সমুদ্রপথে তেল ও গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, কৃষিজ উৎপাদন কমে যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
পরিশেষে
একসঙ্গে ধেয়ে আসা হারিকেন কিকো ও লোরেনা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো কতটা ভয়ঙ্কর হবে এবং কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির ওপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, বিশ্বের দেশগুলো কি এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুত?
এম আর এম – ১১৮৩, Signalbd.com