
গাজ্জা উপত্যকায় টানা বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজ্জা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একদিনে ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৪৪০ জন। ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষের উপরও আঘাত হয়েছে, যেখানে মাত্র একদিনে ২৯ জন নিহত এবং ৩০০ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য সোমবার (৪ আগস্ট) গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
গাজ্জায় এক মাস ধরে টানা হামলা, নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজ্জায় নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৯৩৩ জনে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। গত মাস ধরে বিমান হামলা, স্থলযুদ্ধ এবং নাশকতামূলক অভিযান অব্যাহত থাকায় স্থানীয় জনগণ মারাত্মক বিপর্যস্ত।
গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় বহু পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। বিশেষ করে জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম ও কর্মী সংকটের কারণে বহু মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া আহতদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ত্রাণ নিয়ে আসা সাধারণ মানুষকে ইসরাইলি বাহিনীর রক্তাক্ত নিশানা
ত্রাণ ও মানবিক সাহায্য নিতে গাজ্জায় আসা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপরও ইসরাইলি বাহিনী বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে। শুধু সোমবারই ত্রাণ নিতে আসার সময় ২৯ জন নিহত ও অন্তত ৩০০ জন আহত হয়েছে। গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরাইলি আগ্রাসন: ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি
ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত শতবর্ষের, যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অঞ্চলভিত্তিক বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। গাজ্জা উপত্যকা হলো ফিলিস্তিনের একটি সংকীর্ণ এলাকা, যা ইসরাইল দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ রয়েছে।
ইসরাইলি বাহিনী বিভিন্ন সময় গাজ্জায় বিমান হামলা চালিয়ে বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক এই আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন। গৃহহীন ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
মানবিক সংকট: খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাব
গাজ্জায় অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রীর প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের অভাবে লাখো মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ অবস্থা শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজ্জায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ও ডাক্তার নেই। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না, যা মৃত্যুর হার বাড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
গাজ্জার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ প্রবল। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বহু দেশ ও নেতা ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে অবরুদ্ধ অবস্থা দূর করতে এবং নিরস্ত্র করতে।
বিশ্বব্যাংক ও বিভিন্ন মানবিক সংগঠন ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরাইলের কঠোর নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রার বর্তমান চিত্র
গাজ্জার মানুষ এখন ধ্বংসস্তূপের মাঝে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে। বহু পরিবার গৃহহীন, শিশু ও বয়স্করা দুর্ভিক্ষ ও রোগে আক্রান্ত। বিদ্যুৎ, পানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, স্বাস্থ্যসেবা বাধাপ্রাপ্ত, অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে গেছে। ১৮ লাখের অধিক জনগণ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ভবিষ্যৎ কী? শান্তির জন্য কোন আশা আছে?
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংঘাতের অবসান সম্ভব হতে পারে কেবল যৌক্তিক আলোচনা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের উচিত উত্তেজনা কমিয়ে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। তা ছাড়া দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করা জরুরি, যাতে গাজ্জায় নতুন কোনও সংঘাত না ঘটে।
MAH – 12139 Signalbd.com