বিশ্ব

গাজাবাসীর জন্য সাড়ে ২৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর

গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আরও সাড়ে ২৩ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। রাজধানী কুয়ালালামপুরে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন এবং ইসরায়েলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গাজা উপত্যকার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের পাশে দাঁড়াতে নতুন করে ২৩.৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের ঐতিহাসিক মারদেকা স্কয়ারে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন। সমাবেশে হাজারো মানুষ অংশ নেন এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

ঘোষণার বিস্তারিত

আনোয়ার ইব্রাহিম সমাবেশে বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ আজ ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। শিশু, নারী ও বয়স্কদের ওপর যে নিষ্ঠুর আক্রমণ চালানো হচ্ছে, তা অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। তিনি উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়া শুধু কথায় নয়, বাস্তব সহায়তার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াবে। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন যে মালয়েশিয়া সরকার গাজাবাসীর জন্য আরও সাড়ে ২৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেবে।

সমাবেশ ও জনসমর্থন

কুয়ালালামপুরের মারদেকা স্কয়ারে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশুরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই হাতে ‘গাজার পক্ষে’ ও ‘ইসরায়েলবিরোধী’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ধারণ করে সমর্থন জানান। অনেকে ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে সমাবেশে যোগ দেন।

সমাবেশের নাম দেওয়া হয় ‘মাই মালয়েশিয়া উইথ গাজা’। এটি ছিল ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘সুমুদ নুসান্তারা কার্নিভাল’-এর শেষ পর্ব। এ কার্নিভালে বিশেষভাবে গাজা সংকটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে ছিল ‘গাজা টাইম টানেল’ নামে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অভিজ্ঞতা এবং ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।

ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসন গাজাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু ও নারী। এছাড়া, অবরোধ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গাজা উপত্যকায় এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ওষুধের সংকট, খাবার ও পানির অভাব, এবং নিরাপদ আশ্রয়ের ঘাটতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান গাজার পক্ষে আরও জোরালোভাবে দাঁড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, কেবল মুসলিম বিশ্ব নয়, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো প্রতিটি দেশের উচিত ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। আনোয়ার ইব্রাহিমের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন মালয়েশিয়ার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ার এ ধরনের অর্থ সহায়তা শুধু মানবিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও তা তাৎপর্যপূর্ণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে দৃঢ়। তারা মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য মুসলিম দেশগুলোকেও ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে আরও অনুপ্রাণিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের কঠোর বক্তব্য

সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি তাকে ‘নিষ্ঠুর’ এবং ‘উন্মাদ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, শিশুদের ওপর হামলা চালিয়ে কোনো রাষ্ট্র নিজেকে সভ্য দাবি করতে পারে না। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রামে তার দেশ সবসময় পাশে থাকবে।

উপসংহার

মালয়েশিয়ার এই সহায়তা নিঃসন্দেহে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য এক আশার আলো। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই সহায়তা কি গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয় থামাতে যথেষ্ট? বিশ্লেষকদের মতে, কেবল অর্থ বা খাদ্যসামগ্রী নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমেই ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করা সম্ভব। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব সম্প্রদায় কতটা ঐক্যবদ্ধভাবে এই মানবিক বিপর্যয়ের অবসানে উদ্যোগ নেয়।

এম আর এম – ১০২৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button