লন্ডনে সিজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা: হাসনাত
রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও আলোচনার ঝড় তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। তার মতে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির এমন কর্মকাণ্ড দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রশ্ন তুলেছে এবং জনগণের স্বার্থের বিপরীতে গেছে।
বিস্তারিত
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাসনাত এই অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যে নেতাকে রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়েছে, তিনি বিদেশে গিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে নতজানু হয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নজির বিরল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হাসনাতের দাবি, সেদিনই লন্ডনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সরকারকে বেচে দিয়েছেন এবং জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে আসছে। ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার পর থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ক্রমশ বাড়ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপ নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো মনে করছে, জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশে বসে নির্বাচন রোডম্যাপ ঠিক করা একধরনের অস্বচ্ছতা।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
হাসনাত শুধু অভিযোগই করেননি, বরং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস। অথচ এখন বিদেশি মঞ্চ থেকে সিদ্ধান্ত আসছে। মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মতে, গণমাধ্যমের একটি অংশ রাজনৈতিক দলের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, ফলে প্রকৃত সত্য জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনেও রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট। সচিবালয়ে অফিস শেষ হওয়ার আগেই গুলশান ও পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে ভিড় জমে। আগে যেটা হতো ধানমন্ডি ৩২ কিংবা গুলিস্তানে। এখন সেই প্রভাবশালী কেন্দ্রগুলো স্থানান্তরিত হয়ে গেছে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রশ্ন
নির্বাচন প্রসঙ্গে হাসনাত জানান, তাদের দলের কোনও সমস্যা নেই নির্বাচনের সময় নিয়ে। নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন হোক, তাতে আপত্তি নেই। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। একইসঙ্গে ‘রুলস অব দ্য গেম’ পরিবর্তনের দাবিও জানান। পুরনো সংবিধানকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদের পাঠ্যবই’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তোলেন।
দুর্নীতির অভিযোগে চ্যালেঞ্জ
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাসনাত নিজের দলের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি বা তার সহযোগীরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তবে তিনি রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেবেন। এমনকি একটি নথিপত্রও দেখাতে পারলে তিনি সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এই বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বক্তব্যগুলো বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে। বিরোধী দলের অভিযোগ যে, বিদেশি প্রভাবের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা অনেকের কাছে যৌক্তিক মনে হতে পারে। তবে শাসকগোষ্ঠী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সংক্ষিপ্তসার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিটি নির্বাচনই নতুন আশা ও শঙ্কার জন্ম দেয়। লন্ডনে সিজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার অভিযোগে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জনগণ অপেক্ষা করছে—সামনের দিনগুলোতে এই সংকট সমাধানের পথে কী সিদ্ধান্ত আসে এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি বাস্তবে রূপ নেয় কি না।
এম আর এম – ০৮৭৮, Signalbd.com



