
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৬ জন ফুটবলারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় মাসিক বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন ফুটবলাররা, যারা পিটার বাটলারের অধীনে চলমান অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে এই তালিকায় বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত ১৮ নারী ফুটবলারকে রাখা হয়নি। এদিকে, এসব ফুটবলারের জন্য এখনও চুক্তির দ্বার খোলা রয়েছে, যদি তারা পুনরায় অনুশীলনে ফিরতে চান।
বিদ্রোহীদের বাদ দিয়ে নতুন চুক্তি
কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় আসা ৩৬ ফুটবলারের মধ্যে বেশিরভাগই দেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য। বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের চুক্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল, আর সেই সব ফুটবলাররা অনুশীলন থেকে বিরত থাকার কারণে তাদের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে, বাফুফে সূত্রে জানা গেছে যে, এই ফুটবলাররা যদি ফের অনুশীলনে ফিরে আসেন, তাদেরও চুক্তির আওতায় আনা হবে।
এদিকে, বাফুফে কর্তৃপক্ষ জানায় যে, মোট ৫৫ ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ ফুটবলারের সঙ্গে বর্তমানে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ১৯ জনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে সামনের দিনগুলিতে। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে কার্যকর হওয়া এই চুক্তি, বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে ওইসব ফুটবলাদের, যারা নিয়মিত অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন।
চুক্তি করতে যাওয়া ফুটবলারদের তালিকা
অনুশীলনে থাকা ৩৬ ফুটবলারদের মধ্যে কিছু পরিচিত নাম রয়েছে, যাদের নাম আগে থেকেই জাতীয় ফুটবল দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের সদস্য আফিদা খন্দকার, শাহেদা আক্তার রিপা, কোহাতি কিসকো, মুনকি, এবং আইরিন আক্তার সহ অনেকেই এই চুক্তির আওতায় এসেছেন। এদের মধ্যে সুরমা খাতুন, আকলিমা খাতুন, সুরভী আকন্দ প্রীতি, জয়নব বেগম, অর্পিতা, এবং হালিমারা শুরু থেকে পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করছেন।
এছাড়া, এই মাসের শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নারী ফুটবল দল। কিন্তু বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাদের না থাকার সম্ভাবনা বেশিরভাগই।
চুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা
বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা আবারো অনুশীলনে ফিরতে চান, তাদের জন্যও পথ খোলা রাখা হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, যদি তারা আবার মাঠে ফিরে আসেন, তবে তাদেরও চুক্তির আওতায় আনা হবে। এই সিদ্ধান্তটি বাফুফের পক্ষ থেকে তাদেরকে দেয়া একটি সুযোগ, যাতে তারা দলভুক্ত হয়ে জাতীয় দলে ফিরে আসতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। মাসিক বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে খেলোয়াড়রা আরও মনোযোগ দিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং দেশের ফুটবল উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবেন। এই চুক্তি মেয়েদের ফুটবলের প্রতি বাফুফের গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে, পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড়দের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।
চুক্তির প্রভাব
বাফুফের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তি করা এই ৩৬ ফুটবলাররা শুধুমাত্র নিজেদের ফুটবল ক্যারিয়ার উন্নত করার সুযোগ পাবেন না, বরং তারা ফুটবলে ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় পরিকল্পনা করতে পারবেন। এই চুক্তির ফলে, দেশের ফুটবল খেলার মান উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারবেন এবং আরও উন্নত কোচিং পদ্ধতির আওতায় থাকবেন।
এর ফলে, দলটির আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলিতে আরও ভালো পারফরম্যান্স করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এছাড়া, ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রজন্মের ফুটবলপ্রেমী মেয়েরা আগ্রহী হবে ফুটবল খেলার প্রতি। এতে, নারী ফুটবলের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া শুরু হবে এবং দেশের খেলাধুলার পরিবেশে নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে।
সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ
যদিও এই চুক্তি অনেক ফুটবলারের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে, তবে এর মধ্যেও কিছু সমালোচনা উঠেছে। বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কিছু পর্যবেক্ষক ন্যায়বিচারের অভাব হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, যদি ওই ফুটবলারদের কিছু ভুল হয়ে থাকে, তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা উচিত ছিল, না হলে তাদের চুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আরও কার্যকর হবে।
এছাড়া, কিছু ফুটবলার মনে করছেন যে, চুক্তির আওতায় থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা গত কয়েক বছর ধরে কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন, তাদেরকে আরও বেশি সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের জন্য খেলা খেলোয়াড়দের অবদানকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এদিকে, বাফুফে আরও জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে দেশের ফুটবল উন্নয়নে আরও বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে, নারী ফুটবলের ক্ষেত্রে আরো তৎপরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাফুফে কর্তৃপক্ষ আশা করছে, কেন্দ্রীয় চুক্তি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে দেশের ফুটবলে নতুন শক্তি সৃষ্টি হবে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মর্যাদা বাড়াতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
বাফুফে কর্তৃক কেন্দ্রীয় চুক্তি সম্পাদন করার এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ৩৬ ফুটবলারের সাথে এই চুক্তি একটি নয়া অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা দেশটির ফুটবলের উন্নতি ও প্রতিযোগিতায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তবে, বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকবে, যা দেশের ফুটবল দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।