৩৫ টাকার পেঁয়াজ এক সপ্তাহেই ৬০

রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন থামছেই না। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই নিত্যপণ্যটি। শুধু পেঁয়াজ নয়, সবজির বাজারেও তেমন একটা স্বস্তি নেই। এর মধ্যে পুরনো বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন, বর্ধিত দামে – যা ক্রেতাদের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মৌসুমের শেষ সময়ের অজুহাত দেখাচ্ছেন এবং বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। তবে ক্রেতারা এই যুক্তি মানতে নারাজ।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, সাততলা বাজার ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
সাততলা বাজারের ‘রিপা জেনারেল স্টোরের’ স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল সপ্তাহেও পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামেই কিনেছি। আর এখন মৌসুম শেষ পেঁয়াজের। এ সময়ে দাম বাড়ে।”
তবে ক্রেতারা এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। সাততলা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ রিয়াজ বলেন, “দাম পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে বুঝলাম। তো ওনারা তো প্রতিদিন পেঁয়াজ আনেন না। নিশ্চয় আগের স্টকে থাকা পেঁয়াজ। চাইলেই আরও কয়েকদিন আগের দামে বিক্রি করতে পারত; তা তো করবে না।”
একই বাজারে আসা জেসমিন বেগম নামের আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজ নিলাম ৩৫ টাকা করে। আজ দেখি একটু ভালো মানের হলে ৬০ টাকা; আর অন্যগুলো ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। জানলে আগে আরও কয়েক কেজি নিয়ে রাখতাম। আমি হোটেল চালাই। পেঁয়াজ লাগে আমার।”
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আল আমীন বলেন, “এবার রোজা পড়েছিল সবজি, পেঁয়াজ- এগুলোর মৌসুমের মধ্যে। এজন্য সবজি বলেন বা পেঁয়াজ, দাম কম ছিল। এখন কৃষকের হাতে পেঁয়াজ নেই। আছে পাইকারদের কাছে; হিমাগারে। তারা এখন রেখে-রেখে দাম বাড়াবে। হয়ত আরও বাড়বে সামনে।”
এদিকে, বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম তেমন একটা কমেনি।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে পাঁচ মাসের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। যদিও নতুন দামের তেলের বোতল এখনও বাজারে পুরোপুরি আসেনি, তবে বিক্রেতারা পুরনো দামের বোতলই নতুন দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২২ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের লিটার ১২ টাকা বেড়ে ১৬৯ টাকা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত মঙ্গলবার সয়াবিন তেলের নতুন দর ঘোষণা করে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছি। এ মুহূর্তে ফর্মুলা অনুযায়ী তেলের দাম আছে প্রতি লিটার ১৯৭ টাকা। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাম নির্ধারণ করেছি।”
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “সরকার ভোজ্যতেলে কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এতে মাসে ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল।”
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সবশেষ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল, যখন লিটারপ্রতি দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপরও পাঁচ মাসে সয়াবিন তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। উল্টো গায়ের দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি এবং তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য ধরিয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ করেছিলেন ক্রেতারা।
শুক্রবার বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭৫ টাকা গায়ের মূল্যের তেল বিক্রেতাদের অনেকেই নতুন দামে বিক্রি করছেন।
সাততলা বাজারে তেল কিনতে আসা মো. হাফেজ বলেন, “বোতলের তেল আমি কিনেছি ১৯০ টাকা করে গতকাল। সেই তেলের গায়ের মূল্য ১৭৫ টাকা।”
এই বাজারের বিক্রেতা জুয়েল মিঞা বলেন, “দুই-চার দিনের মধ্যেই নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে আসা শুরু করবে। তখন আর দাম নিয়ে ঝামেলা থাকবে না।”
রাজধানীর বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনও বেশ চড়া। বেশিরভাগ সবজি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা ও কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁকরোলের দাম, যা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া সজনে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা ও পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।
বাজারে শীতকালীন কিছু সবজি এখনও পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দামও বেশ চড়া। শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো আকার ও মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এবং চাল কুমড়া মিলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
রোজার সময় যে লেবুর দাম বেড়েছিল, সেই লেবুর হালি এখন ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং ধনে পাতার কেজি ১৪০ টাকা। ক্যাপসিকাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
নিকেতন কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা জয়নাল হোসেন বলেন, “গরমকালের (গ্রীষ্মকালীন) সবজির দামটা এখনও একটু বেশি। এটা কমতে একটু সময় লাগবে। সরবরাহ আরও বাড়লে দাম কমে আসবে আশা করি।”