প্রযুক্তি

স্টারলিংক স্যাটেলাইটে হুমকির মুখে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল

Advertisement

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ সহজলভ্য করতে মহাকাশে হাজার হাজার স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। তবে এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাঝেই নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বৈজ্ঞানিক মহলে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, স্টারলিংকসহ অন্যান্য কৃত্রিম উপগ্রহের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, বিশেষত ওজোনস্তর, এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে।

বর্তমানে মহাকাশে স্টারলিংকের প্রায় ৮,০০০ স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে, যেগুলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit) ঘুরে বেড়াচ্ছে। হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের সাবেক গবেষক জনাথন ম্যাকডাওয়েল জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুইটি স্যাটেলাইট তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং সেখানে পুড়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় যে ধাতব কণা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, তা ভবিষ্যতে ওজোনস্তর ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কক্ষপথে ভিড়, বাড়ছে মহাকাশ আবর্জনা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বেসরকারি সংস্থা বর্তমানে মহাকাশে বিপুল সংখ্যক স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে। জনাথন ম্যাকডাওয়েলের হিসাবে, বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রায় ২৫,০০০টির বেশি মহাকাশ আবর্জনা (Space Junk) রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অকেজো স্যাটেলাইট, পুরোনো রকেটের অংশ, এবং স্যাটেলাইট সংঘর্ষে তৈরি হওয়া ধাতব টুকরো।

প্রতিটি স্যাটেলাইটের গড় আয়ু প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা ৩০,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৫টির মতো স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গঠন ও রাসায়নিক ভারসাম্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্ষতির শঙ্কা: ওজোনস্তরের ভবিষ্যৎ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)-এর রসায়নবিদ ড্যানিয়েল মারফি-র নেতৃত্বে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্যাটেলাইটগুলো যখন পুড়ে যায়, তখন তারা বায়ুমণ্ডলে অ্যালুমিনিয়াম, লিথিয়াম, তামা প্রভৃতি ধাতব কণা ছড়িয়ে দেয়।

বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম থেকে তৈরি হওয়া যৌগগুলো সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে ভেঙে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করে, যা ওজোনস্তরের জন্য বিপজ্জনক। ক্লোরিন গ্যাস ওজোন অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে তা ধ্বংস করে দেয়। এই ওজোনস্তরই আমাদেরকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (UV) রশ্মি থেকে রক্ষা করে।

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রভাব

ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে পৃথিবীতে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি প্রবেশ করতে পারে, যার প্রভাব মানবদেহে ভয়াবহ হতে পারে। এর ফলে ত্বকের ক্যানসার, চোখের ছানি, ও অন্যান্য চোখের রোগ ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। এছাড়া উদ্ভিদ, কৃষি, ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সমাধান কোথায়?

বর্তমানে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিজ্ঞানীরা সচেতন নীতিমালার দাবি তুলছেন। তারা বলছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ করা এবং সেগুলোর আয়ু শেষে নিরাপদভাবে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া তৈরি করা জরুরি।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারকদের এখনই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

NA-100005,signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button