মা কিংবা টেস্টটিউব নয়, বাচ্চা জন্মাবে চীনের কৃত্রিম রোবট গর্ভে

চীনের বিজ্ঞানীরা মানব ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছেন। তাঁদের তৈরি করা একটি কৃত্রিম রোবট মা হিসেবে ভ্রুণ ধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবে। এই খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিশ্বের প্রযুক্তি ও চিকিৎসা জগতে চরম আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রোবট গর্ভধারণের প্রযুক্তি
চীনের গুয়াংঝৌ ভিত্তিক ‘কাইওয়া টেকনোলজি’ সংস্থা জানিয়েছে, তারা এমন একটি হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করছেন যা মাতৃগর্ভের মতোই ভ্রুণ ধারণ করতে পারবে। রোবটটির ভ্রুণের জন্য কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড থাকবে, যা মানব মাতৃগর্ভের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকরণ করবে। ভ্রুণটি রোবটের ভিতরে ৯ মাস বৃদ্ধি পাবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও উপাদান রোবটের সিস্টেম থেকে সরবরাহ করা হবে।
ঝ্যাং কিফেং, সংস্থার প্রধান গবেষক, বলেন, “রোবটের গর্ভে ভ্রুণ প্রবেশের পর এটি মানুষের সঙ্গে যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে। রোবট মাতার মূল কাজ হচ্ছে সন্তানের নিরাপদ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা।”
প্রকল্প
চীনের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রিম্যাচিওর শিশুদের বাঁচানোর জন্য কৃত্রিম ‘বায়ো ব্যাগ’ ব্যবহারের ধারণা নিয়ে কাজ করছেন। সেই প্রযুক্তি থেকেই এই কৃত্রিম গর্ভধারণ রোবটের ধারণা উদ্ভূত হয়েছে। সংস্থার বক্তব্য, রোবটটি ব্যবহার করলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়েদের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হবে না।
2007 সালে চীনে বন্ধ্যত্বের হার ছিল 11.9 শতাংশ। 2020 সালে তা বেড়ে হয়েছে 18 শতাংশ। এই প্রেক্ষাপটে সংস্থা মনে করছে, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মানুষের উপকারে আসতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোবট মাতার ধারণা সমাজে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। মায়েদের জন্য গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। তবে শিশুর জন্ম ও মানবাধিকারের দিক থেকে এটি নতুন ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।
চীনের আইন ও বিভিন্ন দেশের গর্ভধারণ সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কারণে এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিশু জন্মের ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহারের নৈতিক ও আইনি প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
খরচ ও বাজারজাতকরণ
প্রকল্পটি প্রায় শেষের পর্যায়ে। সংস্থা জানিয়েছে, আগামী বছর থেকে তারা রোবটটি বাজারে আনবে। রোবটটির আনুমানিক মূল্য হতে পারে ১০ হাজার পাউন্ড, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। তবে ভ্রুণ তৈরি, প্রবেশ এবং শিশু ভূমিষ্ঠের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি সংস্থা এখনো প্রকাশ করেনি।
বিশেষজ্ঞ মতামত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি মানব জীবনে বিপুল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। কৃত্রিম গর্ভধারণ রোবট মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করবে এবং ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্ব সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তবে শিশু অধিকার ও নৈতিকতার বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
চীনের এই নতুন উদ্ভাবন মানবজাতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। মা বা টেস্টটিউব ছাড়াই রোবটের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে। যদিও প্রযুক্তিগতভাবে এটি অত্যাধুনিক, তবুও সামাজিক, নৈতিক ও আইনি দিক থেকে এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। আগামী দিনগুলোতে রোবট মাতার বাস্তবায়ন এবং তা কিভাবে মানব জীবনে প্রভাব ফেলবে, তা সমগ্র বিশ্বের নজর কাড়বে।
এম আর এম – ১১৮৮, Signalbd.com