আঞ্চলিক

নোয়াখালী হাসপাতালে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান, ৭ জনের কারাদণ্ড

Advertisement

নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহীতা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং প্রলোভন দেখানোর অভিযোগে সাতজন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাব হোসাইন ও র‍্যাব-১১ এই অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযান ও কারাদণ্ড সংক্রান্ত বিস্তারিত জানিয়ে মেহরাব হোসাইন বলেন, “হাসপাতালের বাইরে ও ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছিল। তারা রোগীদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতো এবং সেখান থেকে বড় অঙ্কের কমিশন নিত। এই ধরনের অনিয়ম ও প্রতারণা বন্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দালালদের তালিকা

ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায় অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন:

  • মিলন (৩৫) – ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড
  • হারুন (৩৪) – ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড
  • সজিব (২৫) – ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড
  • রতন (৩৮) – ৩০ দিন কারাদণ্ড
  • আকরাম হোসেন (২৫) – ৭ দিন কারাদণ্ড ও ৫০ টাকা জরিমানা
  • স্বপন (৪৪) – ১৫ দিন কারাদণ্ড ও ৫০ টাকা জরিমানা
  • মাসুদ (৪৫) – ১৫ দিন কারাদণ্ড ও ৫০ টাকা জরিমানা

র‍্যাব-১১ (সিপিসি-৩) কোম্পানি কমান্ডার মিঠুন কুমার কুন্ডু জানান, “রোগীদের চিকিৎসা সেবার স্বার্থে সাতজন দালালকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে এবং তারা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই অভিযান রোগীদের নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

দালাল চক্রের কৌশল ও প্রতারণার ধরণ

অভিযান সূত্রে জানা যায়, দালালরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের আশেপাশে অবস্থান করে আসছিল। তারা রোগীদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করত এবং সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেত। এতে তারা হাসপাতাল থেকে বড় কমিশন নিত।

এছাড়াও, দালালরা রোগীদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিত। রোগীর স্বস্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অমনোযোগী এই আচরণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় বাধা সৃষ্টি করছিল। প্রশাসনের অভিযান এই চক্রকে ভেঙে দিতে এবং রোগীদের নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

হাসপাতালের সেবা ও রোগীর নিরাপত্তা

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসে। হাসপাতালের সেবা নিশ্চিত করা এবং রোগীদের নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাব হোসাইন বলেন, “হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। রোগীর নিরাপদ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতে পুনরায় অপরাধীদের দমন করবে।”

ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যপদ্ধতি

ভ্রাম্যমাণ আদালত মূলত এমন ঘটনায় কার্যকর যেখানে জনসাধারণের সুরক্ষা বা সরকারি সম্পদের ক্ষতি ঘটে। এই ধরনের আদালত দ্রুত বিচার প্রদান করতে সক্ষম। নোয়াখালীর এই ঘটনায়ও ভ্রাম্যমাণ আদালত দ্রুত কাজ করে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় অভিযানে প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জেলা প্রশাসন ও র‍্যাবের যৌথ প্রচেষ্টা দৃষ্টান্তমূলক।

রোগী ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

হাসপাতালের আশেপাশের এলাকার মানুষরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে দালালরা রোগীদেরকে হয়রানি করত। অনেক সময় তারা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাত। আজকের অভিযানের পর স্থানীয়রা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

স্থানীয় এক রোগী বলেন, “আমরা অনেকদিন ধরেই দালাল চক্রের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলাম। আজ প্রশাসনের অভিযান আমাদের জন্য বড় স্বস্তি। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের চিকিৎসা সেবা নিরাপদ ও সহজ হবে।”

দালাল চক্রের কারণে স্বাস্থ্যসেবায় ক্ষতি

দালাল চক্র শুধু রোগীদের অর্থ নষ্ট করে না, বরং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষতি ঘটায়। সরকারি হাসপাতালগুলি রোগীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের সেবা প্রদান করে, কিন্তু দালালরা রোগীদের বিভ্রান্ত করে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে প্ররোচিত করে। এতে রোগীকে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

এই অভিযানের মাধ্যমে প্রশাসন শুধু দালাল চক্রকে প্রতিরোধ করেছে না, বরং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে।

ভবিষ্যতে পদক্ষেপ

নোয়াখালী জেলা প্রশাসন ও র‍্যাব ভবিষ্যতে এমন চক্র প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান চালাবে। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোনোয়াখালী হাসপাতালে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান, ৭ জনের কারাদণ্ডরদার করা হবে এবং রোগীর অভিযোগ তৎক্ষণাৎ সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাব হোসাইন বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রোগীর নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। দালাল চক্রের সাথে কোনো ধরনের আপোষ করা হবে না।”

MAH – 12933 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button