সমকামিতার অভিযোগে ডুয়েটের ৫ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার

সমকামিতার অভিযোগে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) পাঁচ শিক্ষার্থীকে তাদের আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
সমকামিতার অভিযোগে বহিষ্কার
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)-এর পাঁচজন শিক্ষার্থীকে সমকামিতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম (কেএনআই) হলের তিনজন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ (এসটিএ) হলের দুজন ছাত্র রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তপূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, যাতে করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা যায়।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ
এই ঘটনার পরপরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ডুয়েট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযুক্তদের শুধু সাময়িক নয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনৈতিক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন এবং প্রশাসনের প্রতি দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান।
প্রশাসনের বক্তব্য ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় বিস্তারিত তদন্ত এখনও চলছে।
ডুয়েটের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস বলেন, “কোনো অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের সাময়িকভাবে হল থেকে বহিষ্কার করেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমকামিতা বিষয়ে দেশের সামাজিক ও আইনগত প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সমকামিতা একটি আইনগত অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, স্বাভাবিক নয় এমন যৌনাচার করলে তার জন্য শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমকামিতা অধিকাংশ দেশে বৈধতা পেলেও বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় এটি এখনও সামাজিকভাবে বিতর্কিত ও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের আচরণ শুধু আইনি নয়, সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকেও প্রশ্নের জন্ম দেয়। ফলে এ ধরণের অভিযোগ উঠলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মনোভাব
ঘটনার পর ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা পুরো পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”
তবে অপরদিকে, কিছু শিক্ষার্থী বলছেন, বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াই শ্রেয়।
অতীতেও এমন ঘটনা?
ডুয়েটে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে কিনা, তা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না করলেও, শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে গোপনে এমন কিছু বিষয় আগে শোনা গেলেও কোনোদিন এভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে এই প্রথমবার এমন সিদ্ধান্তে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিও নতুনভাবে সামনে এসেছে।
ভবিষ্যতের করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং ও নিয়মিত পরিবেশ পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসনের উচিত প্রতিটি অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে ছাত্রকল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, “সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও নৈতিকভাবে গঠিত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, নৈতিক উন্নয়নেরও ক্ষেত্র।”
সারসংক্ষেপ
ডুয়েটের এই সাম্প্রতিক ঘটনা শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘটনা নয়, বরং বড় একটি সামাজিক প্রসঙ্গের প্রতিফলন। এটি আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে — শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও আচরণগত শৃঙ্খলা কীভাবে রক্ষা করা যায়। তদন্তের ফলাফল সামনে এলেই জানা যাবে অভিযুক্তরা দোষী কি না। তবে এরই মধ্যে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা দিয়ে গেল — শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো অনৈতিকতা বরদাশত করা হবে না।
এম আর এম – ০৫০৫, Signalbd.com