সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বাড়াতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ সরকারের সরকারি খাতকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দক্ষ করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক নতুন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য ২৫ কোটি ডলার (২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদে এই ঋণের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই ঋণের মূল লক্ষ্য হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো, সেবার গুণগত মান উন্নত করা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগে কাজের গতিশীলতা বাড়ানো। এর ফলে দেশের সার্বিক প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের সরকারি সেবা সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার
বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্যাকেজটি ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের অধীনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন ও সংস্কারের আওতায় আনা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
- পরিকল্পনা বিভাগ
- সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ (বিপিপিএ)
- মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দপ্তর (সিএজি)
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। কর ব্যবস্থার উন্নতি, পরিসংখ্যানের নির্ভরযোগ্যতা, সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাল পদ্ধতি ও নিরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এই প্রকল্পের মূল দিক।
ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে নিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান গেইল মার্টিন বলেন, “আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সরকার পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা বাড়াতে চাই। এটি দুর্নীতি হ্রাসে সহায়ক হবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি সেবাকে আরও সহজলভ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।”
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণের মাধ্যমে কর প্রশাসনে আধুনিকায়ন করা হবে। করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং রাজস্ব আয়ও উন্নত হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে যাতে জনগণের টাকায় সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যায়।
পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে তথ্যভিত্তিক ও নির্ভরযোগ্য। সরকারি ক্রয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হবে এবং নিরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সুশাসন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের প্রধান সুলেমানে কুলিবালি বলেন, “যখন এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে সংস্কার আনা হবে, তখন সরকারের সামগ্রিক সক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। সুশাসনই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির জন্য গুণগত পরিবর্তন আনে এবং জনগণের জীবনযাত্রা উন্নত করে।”
ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার সম্ভাবনা
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আরেকটি ঋণ নিয়ে আলোচনাও চলছে। এ মাসের শেষ দিকে বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদে আলোচনা হবে। ঐ ঋণ প্রকল্প ব্যাংক খাত, কর ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয় ও সামাজিক সেবা খাতে আরও স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা আনার লক্ষ্যে সাহায্য করবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অবদান
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক কাজ করে আসছে। বিশ্বব্যাংক এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) অনুদান, সুদমুক্ত ও স্বল্প সুদের ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণের অন্যতম বড় গ্রহীতা হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, কৃষি, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মতো খাতে বিশ্বব্যাংকের নানা প্রকল্প দেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
সরকারি খাতের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ২৫ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো, সেবা উন্নতকরণ এবং কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। প্রকল্পটির ফলে দেশের সরকারি কার্যক্রম আরও জবাবদিহিমূলক ও জনগণমুখী হবে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে নতুন ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।