আবহাওয়া

ঝড়ের পূর্বাভাস: সকালে ১০ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ঝোড়ো হাওয়া

দেশব্যাপী চলমান খরার প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করেই নতুন করে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাস অনুযায়ী, রোববার (১৫ জুন) সকাল ৯টার মধ্যে দেশের অন্তত ১০টি জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি জনজীবনে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে সৃষ্ট সক্রিয় বায়ুর কারণে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই ঝড়ো হাওয়ার আওতায় যে জেলাগুলোর উপর দিয়ে ঘূর্ণি বয়ে যেতে পারে, সেগুলো হলো—রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট।

তিনি জানান, “এই ঝড় সাময়িক হলেও ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো, বজ্রপাত এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নৌযান ও ছোট ট্রলারগুলোকেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।”

তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত, তবুও ২৪টি জেলা উত্তপ্ত

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাপপ্রবাহের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখনো ২৪টি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর এবং মাদারীপুর। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিছু কিছু এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা গ্রীষ্মকালীন স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই আবহাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তিন দিনব্যাপী ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে সোমবার (১৬ জুন) থেকে দেশের বিভিন্ন বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা এবং রাজশাহী বিভাগে কোথাও কোথাও প্রবল বর্ষণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, “দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বর্তমানে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এর প্রভাবে আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে করে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”

পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস ও নগরীতে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। অতীতে এ ধরনের আবহাওয়ার ফলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তাই প্রশাসনকে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে সাময়িক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। সড়কপথে যান চলাচলে বিঘ্ন, জলজট এবং নাগরিক দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা

অন্যদিকে, কিছু কৃষি বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই বৃষ্টিপাত খরার মধ্যে আক্রান্ত ফসলের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। বিশেষ করে আমন ধানের চারা রোপণের জন্য উপযোগী মাটি তৈরিতে বৃষ্টি সহায়ক হবে। তবে অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষেতের ক্ষতিও হতে পারে, যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকে।

সতর্কতা ও করণীয়

আবহাওয়ার এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণি হাওয়ার সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এছাড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বড় গাছপালা ও জলাশয়ের পাশে অবস্থান না করতেও বলা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরাঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ড্রেন পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে।

উপসংহার:

বর্তমান আবহাওয়ার গতিপথ বলছে, একদিকে যেমন তাপপ্রবাহের প্রকোপ কিছুটা কমছে, অন্যদিকে ঝড়-বৃষ্টির কারণে জনজীবনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। সঠিক পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব। জনসাধারণকে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট অনুসরণ করতে এবং জরুরি প্রয়োজনে নিকটস্থ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button