ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা, দেশে ফিরেই পুলিশের হাতে সোপর্দ

সিলেট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বিএসএফের হাতে আটক হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোখলেছুর রহমান সুমন। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দেশে ফেরার পর পুলিশ তাঁকে আইনি হেফাজতে নেয়। মামলার ভয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
কিভাবে ধরা পড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল সীমান্তের ১২৭৭ নম্বর পিলার এলাকা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন মোখলেছুর রহমান সুমন (৪০)। তার সঙ্গে ছিলেন আবুল কালাম (৩২) নামে আরও একজন। বিএসএফ দাবি করেছে, তারা ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। আটক করার পর ডাউকি ক্যাম্পে নিয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী।
১২ জুলাই দুপুরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় বিএসএফ সুমন ও কালামকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। বিজিবি পরে তাঁদের গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
আটক ব্যক্তিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক পরিচিতি
মোখলেছুর রহমান সুমন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার হাজি ইরফান উদ্দিন মাতব্বরের ছেলে। তিনি এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার সঙ্গে আটক আবুল কালাম সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অজুহাত গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, কালামই তাকে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার সহায়তা করেন।
পালানোর কারণ: মামলার ভয়ে সীমান্ত পার
পুলিশ জানিয়েছে, সরকারের মেয়াদ শেষে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর মোখলেছুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। মামলা ও গ্রেফতারের ভয়েই তিনি ভারত পালানোর চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি আবুল কালামের সঙ্গে এক লাখ টাকার চুক্তিতে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে জানা গেছে।
গোয়াইনঘাট থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসএম কবির হোসেন বলেন, “তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক তদন্তে অনেক কিছুই বেরিয়ে এসেছে।”
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে অনেকেই সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখছেন।
একজন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “ক্ষমতা হারানোর পর অনেক নেতা-কর্মী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে গেছেন, কেউ আবার দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।”
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রমাণ হলো সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কতটা জোরদার হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের সমন্বয়ে দ্রুত পতাকা বৈঠক ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া কার্যকর হয়েছে, যা দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির পরিচায়ক।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও ভবিষ্যৎ প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পালাবদলের সময় অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়াই এমন পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। তবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের এভাবে সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা কতটা নৈতিক ও গ্রহণযোগ্য — তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
“একজন রাজনৈতিক নেতা যদি মামলার ভয়ে দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাহলে তা জনগণের আস্থাকে দুর্বল করে”— এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সারসংক্ষেপ
সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোখলেছুর রহমান সুমন। দুই দিন পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফেরত দেওয়া হয় বাংলাদেশে। ফেরার পরই তাঁকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ভারত পালানোর চেষ্টা এবং বিএসএফের হাতে আটক হওয়ার ঘটনাটি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে— বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তা এবং নৈতিক অবস্থান ঠিক কোথায়?
ভবিষ্যতে কি আরও এমন পালানোর চেষ্টা দেখা যাবে, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হবে— সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০৩১১, Signalbd.com