বাংলাদেশ

বাংলাদেশের আহ্বান, গাজ্জায় যুদ্ধবিরতি চাই অবিলম্বে

গাজ্জার গণহত্যা রোধে অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন

ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০২৫ – গাজ্জার হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণকে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর বর্বর গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “ইসরাইল এখনও অবধি প্রায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে। এই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে দ্রুত বিচারকের সামনে নিয়ে আসা উচিত।”

ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান অপরিহার্য

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।”

গাজ্জা পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতি বাংলাদেশের সদিচ্ছা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গাজ্জার ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্গঠনের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তিনি জানান, “বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন গাজ্জা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত।” তিনি গাজ্জায় জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়া প্রতিরোধের আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই তিনদিনব্যাপী ‘জাতিসংঘ হাইলেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অফ দ্য প্যালেস্টাইন কোয়েশ্চন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অফ দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক সম্মেলনে ১১৮ দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের কূটনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

গাজ্জার বর্তমান অবস্থা ও ইতিহাস

গাজ্জা, ফিলিস্তিনের এক ক্ষুদ্র ভূখণ্ড, ইসরাইলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজ্জায় ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যার ফলে অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হামলাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছে।

গাজ্জায় চলছে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট। খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো নানা ধরণের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, অব্যাহত সংঘর্ষ ও অবরোধের কারণে তা পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশের ভূমিকাঃ আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষপাতী

বাংলাদেশ সবসময় থেকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিলিস্তিনের পক্ষে একক ও নিরলস সমর্থন জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বারবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ শুধু কূটনৈতিকভাবে নয়, মানবিক সাহায্যেও ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে।

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কি?

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান মানে হলো ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ তৈরি করা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনেক দেশ এই সমাধানকে সংঘাত নিরসনের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ বলে মনে করে।

তবে, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে বহু রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকট এখনও রয়েছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আস্থা ও সমঝোতা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন।

গাজ্জার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজ্জার পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে ইসরাইলের অবরোধ ও সামরিক অভিযান ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে, যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশের পক্ষ থেকে পুনর্গঠন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গাজ্জার ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত প্রত্যাশা

গাজ্জার সংকট ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার অবসান অনিবার্য। তবে তা শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিয়ে সম্ভব নয়, বরং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ও সমন্বিত অংশগ্রহণে সম্ভব।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই আহ্বান একটি সুস্পষ্ট বার্তা যে, বিশ্বের উন্নত জাতিগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর উচিত অবিলম্বে গাজ্জার জনগণকে রক্ষা করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গাজ্জার গণহত্যা থামাতে এবং ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের আহ্বান বিশ্বমঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আশা করা যায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকটকে মানবতার মাপকাঠিতে বিচার করবে এবং দ্রুতই গাজ্জার জনগণকে মুক্তির আশায় আশ্বস্ত করবে।

 MAH – 12027, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button