তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে হামাসের প্রতিশ্রুতি ইসরাইলের তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ় বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, গাজ্জায় চলমান সংঘর্ষ ও রক্তপাতের মধ্যেও হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে আগ্রহী, যেখানে ইসরাইলের পদক্ষেপ তা অনুযায়ী নয়।
এরদোগান এই মন্তব্য তুর্কি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে করেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি, ইসরাইলের এই বিষয়ে রেকর্ড খুবই খারাপ। যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলা, নিরীহ নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ।”
গাজ্জায় প্রাণহানি ও মানবিক সংকট
এখন পর্যন্ত চলমান সংঘর্ষে গাজ্জায় অন্তত ২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা বেশি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, “ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও নিরীহ মানুষ হত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পশ্চিম তীরের দখল ও আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে, যা মানবতার বড় ক্ষতি সাধন করছে।”
তিনি আরও বলেন, “গাজ্জার নিরীশ্চিত মানুষদের নিরাপত্তা ও মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এখন সবচেয়ে জরুরি। তুরস্ক সব সময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে আছে এবং আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
ইসরাইলের নীতি ও আন্তর্জাতিক চাপ
প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরাইলের কূটনৈতিক আচরণ ও নীতিকেও তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি প্রশাসনের মুখোমুখি, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে শতাধিক নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। তারা পশ্চিম তীর দখল ও আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। জেরুজালেমের অবস্থা পরিবর্তন ও আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংহতির জন্য বিপজ্জনক।”
এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের মানবিক অধিকার রক্ষা করা এবং ইসরাইলের একপক্ষীয় আক্রমণ বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। এরদোগান বলেন, “সকল রাষ্ট্রকে একজোট হয়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কোনো রাষ্ট্রকে নীরব থাকা উচিত নয়।”
হামাস বনাম ইসরাইল: যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা
গাজ্জায় সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার যুদ্ধবিরতি প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এটি প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছে। এরদোগান এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করেন, হামাস যুদ্ধবিরতি পালন করতে অধিক মনোযোগী, যেখানে ইসরাইলের পদক্ষেপ তা অনুযায়ী নয়। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র চুক্তি নয়, এটি মানবিক দায়িত্বও। হামাস এই দায়িত্ব পালনে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজ্জায় সংঘর্ষ ও রক্তপাতের মূল কারণ হল রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহ ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানতে বাধ্য করছে না। অন্যদিকে, হামাস যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সমর্থন বজায় থাকে।
আঞ্চলিক শান্তি ও তুরস্কের ভূমিকা
তুরস্ক ফিলিস্তিনি জনগণের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরদোগান বলেন, “তুরস্ক সবসময় শান্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াই এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা পশ্চিমা শক্তি ও ইসরাইলকে শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছি। শান্তি শুধুমাত্র চুক্তি নয়, এটি মানবিক দায়িত্বেরও প্রতিফলন।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
ইসরাইলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে তুরস্কের নেতারা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তীব্র সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি বারবার ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানতে আহ্বান জানিয়েছে।
একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, “গাজ্জায় মানবিক সংকট দিনে দিনে গভীর হচ্ছে। ইসরাইলের একপক্ষীয় আক্রমণ শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি। হামাস যুদ্ধবিরতি মানায় আগ্রহী হলেও ইসরাইলের পদক্ষেপ তা অনুযায়ী নয়।”
ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিভঙ্গি
ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এরদোগানের সমর্থনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তারা বলছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে মানবিক সংকট কমানো সম্ভব। হামাস যুদ্ধবিরতি মানায় আগ্রহী, কিন্তু ইসরাইলের পদক্ষেপ আমাদের জীবন নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রাখছে।”
ফিলিস্তিনি নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছাড়া ইসরাইল একপক্ষীয় হামলা বন্ধ করবে না। তাই তুরস্কের মত রাষ্ট্রদের কূটনৈতিক চাপ এবং সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের বক্তব্য স্পষ্ট করে, গাজ্জার সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিরতি প্রয়োগে হামাসের মনোভাব ইসরাইলের তুলনায় অনেক বেশি মানবিক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তৎপরতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজ্জায় শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরীহ মানুষের সুরক্ষা, এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সবচেয়ে জরুরি। তুরস্ক ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থেকে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ও শান্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের পদক্ষেপই গাজ্জায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়ায়।
MAH – 13622 I Signalbd.com



