বংশাল থেকে জনসন, সানসিল্কসহ দামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য জব্দ

রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে জনসন, সানসিল্ক, ডাভ, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স, প্যানটিনসহ দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনসামগ্রী জব্দ করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বুধবার সন্ধ্যায় পরিচালিত বিশেষ মোবাইল কোর্টের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য উদ্ধার করা হয়। বিএসটিআইয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি অসাধু চক্র নামীদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী নকল করে বাজারজাত করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বংশালের পেয়ালাওয়ালা মসজিদ–সংলগ্ন ৫৮ নম্বর বংশাল ঠিকানার একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত কারখানায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কানিজ ফাতেমা। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত নিম্নমানের কাঁচামাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জব্দকৃত নকল প্রসাধনসামগ্রী
অভিযানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচুর নকল প্রসাধনী জব্দ করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- শ্যাম্পু: সানসিল্ক, ডাভ, প্যানটিন, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স, জনসন
- তেল: প্যারাসুট বেলি ফুল, নবরত্ন
- বেবি কেয়ার পণ্য: জনসন বেবি অয়েল, জনসন বেবি পাউডার
- লোশন ও ক্রিম: ভ্যাসলিনসহ অন্যান্য নামিদামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস
এছাড়াও, বিপুল পরিমাণ খালি বোতল, লেবেল, উৎপাদিত নকল সামগ্রী এবং বিভিন্ন নিম্নমানের রাসায়নিক উপাদান জব্দ করা হয়েছে। বিএসটিআই কর্মকর্তারা জানান, এসব পণ্য ব্যবহারে মারাত্মক ত্বকের সমস্যা, চুলের ক্ষতি, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
নকল প্রসাধনী উৎপাদনের কৌশল
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রটি মূলত নিম্নমানের কাঁচামাল ও রাসায়নিক ব্যবহার করে নামীদামি ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি করতো। পরে এগুলো বাজারে ব্র্যান্ডের নামযুক্ত লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা হতো। উৎপাদনকারীরা ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে নকল পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখত, যা সাধারণ মানুষের প্রতারণার শিকার হওয়ার একটি প্রধান কারণ।
ভোক্তাদের জন্য সতর্কবার্তা
বিএসটিআই কর্মকর্তারা ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, প্রসাধনী কেনার সময় নকল ও আসল পণ্য পার্থক্য করার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে—
- মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ও ব্যাচ নম্বর: নকল পণ্যে প্রায়ই ভুল ব্যাচ নম্বর ও অস্পষ্ট মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ থাকে।
- লোগো ও প্যাকেজিং: নকল পণ্যের লোগোতে ছোটখাটো ত্রুটি বা অস্পষ্টতা থাকতে পারে।
- গন্ধ ও রং: আসল পণ্যের তুলনায় নকল পণ্যের গন্ধ ও রঙের পার্থক্য থাকতে পারে।
- মূল্য: আসল পণ্যের তুলনায় অনেক কম দামে পণ্য পেলে সেটি যাচাই করে কেনা উচিত।
- বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনাকাটা: প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের অনুমোদিত বিক্রেতা ও বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইনগত ব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিএসটিআই জানিয়েছে, নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে শুধু খাদ্যপণ্য নয়, বিএসটিআইয়ের আওতাভুক্ত সব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বাজারে কঠোর তদারকি চালানো হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান।
উপসংহার
দেশে নকল প্রসাধনসামগ্রীর অবৈধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বিএসটিআইয়ের এই অভিযান ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে শুধুমাত্র অভিযান পরিচালনাই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নকল পণ্য উৎপাদন বন্ধের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।