আবহাওয়া

সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ চার বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

মৌসুমি বায়ু সক্রিয়, দেশজুড়ে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার আগাম সতর্কতা

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে যে মৌসুমি বায়ু এখন ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে। এর ফলে গতকাল বুধবার রাত থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় আবারো বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ঢাকা বিভাগসহ দেশের আরও তিনটি বিভাগে অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত: সমুদ্রবন্দরগুলোতে ঝুঁকি

উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বায়ুচাপ বেড়েছে, যা সমুদ্রের ওপর ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের চারটি প্রধান সমুদ্রবন্দর — চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা — এ ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করেছে।

এই সতর্কসংকেতের মানে হলো, ওই এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী ধরনের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে সমুদ্রযাত্রীদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে এবং সমুদ্রগামী হওয়া এড়াতে বলা হয়েছে।

ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশালে বৃষ্টির সম্ভাবনা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ এ কে নাজমুল হক জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে আজ ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ স্থানে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ময়মনসিংহের অনেক জায়গাতেও বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ১৫ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নাজমুল হক আরও জানান, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কিছু স্থানে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা ভারী বৃষ্টির মধ্যে পড়ে।

আগামী দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী শনিবার বা রোববার থেকে ময়মনসিংহ, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর জনগণকে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া সচেতনতা ও জরুরি প্রস্তুতি

বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়ায় বর্ষার বৃষ্টি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হলেও, অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় যেকোনো সময় জলাবদ্ধতা, বন্যা ও অবকাঠামোগত ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। তাই আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে।

সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে বন্যা পূর্বাভাস কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হবে। এছাড়া নদী, খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে পানির সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে।

সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা

৩ নম্বর সতর্কসংকেত মানেই সমুদ্রগামী জাহাজ ও নৌকা চলাচলে বিশেষ সতর্কতা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলেছে, যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সমুদ্রগামী যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।

ট্রলার মালিক এবং জেলেদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন উপকূলের কাছাকাছি থেকে দূরে না যান এবং আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরা ও নৌকাযোগাযোগ পরিচালনা করেন।

সারাদেশে বৃষ্টির পরিমাণ ও প্রভাব

গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলেও খুলনা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারী বৃষ্টির কারণে সড়কপথে জলাবদ্ধতা, যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার মতো বড় শহরে দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে।

আবহাওয়া পরিবর্তন ও মৌসুমি বায়ুর গুরুত্ব

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিশেষ প্রভাব ফেলে। এটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি আনে, যা দেশের কৃষি এবং জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কখনো কখনো অতিরিক্ত সক্রিয় মৌসুমি বায়ু ঝড়-ঝঞ্ঝার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা এই মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তনগুলি খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন, কারণ এটি তাদের জীবন-জীবিকা ও সম্পদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

কী করণীয়? — জনগণের জন্য জরুরি নির্দেশিকা

১. আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলুন।
২. ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হবেন না।
৩. ট্রলার ও নৌকা মালিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নৌকা চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
৪. নিজ বাড়ি ও আশপাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।
৫. দুর্গত এলাকা ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধার সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করুন।
৬. জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত উদ্ধার ও সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

সার্বিক পরিস্থিতি ও আগামী দিনের পূর্বাভাস

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ থেকে আগামী কয়েকদিন দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে, বিশেষ করে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া প্রবল হবে। ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগেও বৃষ্টি বাড়তে পারে।

সাগরের ওপর ঝড়ো হাওয়ার কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। নদী-নালা, খাল-বিলের পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং বন্যা পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থা জরুরি।

 MAH – 12042, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button