আঞ্চলিক

সিলেটের পর্যটনের রত্ন সাদাপাথর আজ মরুভূমির মতো শুষ্ক ও শুন্য

সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায়, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লাগামহীন লুটপাটের ফলে প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যকেন্দ্র মরুভূমির মতো রূপ নিয়েছে।

এক বছরে লুটপাটের চিত্র: সাদা পাথরের বিছানা উধাও

গেল বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই লুটপাট থামেনি। উপরের স্তরের পাথর উত্তোলনের পর এখন গর্ত করে নিচের পাথরও উঠানো হচ্ছে। পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, এক বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট সাদা পাথর লুট হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

আগে যেখানে চোখ যায়, সাদা পাথরের বিশাল বিছানা দেখা যেত, এখন সেখানে শুধু ধু-ধু বালুচর। এই অবস্থা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

সাদাপাথর: প্রকৃতির সৃষ্টি ও ইতিহাস

সাদাপাথর হল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি অনন্য পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলের ফলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথরমহালের ধলাই নদের উৎসমুখে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে পাথরের বিশাল ভান্ডার গড়ে ওঠে। এই পাথরগুলোকে ‘ধলাসোনা’ বলা হয়।

১৯৯০ সালের পর প্রায় ২৭ বছর বাদে নতুন করে এখানে পাথর জমা হয়। ২০১৭ সাল থেকেই উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় এটি সংরক্ষিত ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের দুঃখ-কষ্ট

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, এই সাদা পাথরগুলো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। এখান থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার আয় হতো। কিন্তু লুটপাটের কারণে পর্যটক কমে গেছে, আর ব্যবসায়িক অবস্থা সংকটজনক।

তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সাদাপাথর সংরক্ষণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি অপরিবর্তনীয়?

পরিবেশকর্মীরা বলেন, পাথরের ব্যাপক উত্তোলনের ফলে শুধু সৌন্দর্য নষ্ট হয়নি, বরং পরিবেশগত ভারসাম্যও বিঘ্নিত হয়েছে। পাথরের নিচের স্তরগুলো তুলে ফেলা হলে নদী ও পার্শ্ববর্তী জমির ক্ষতিও বাড়বে।

এর ফলে এলাকার জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি ক্ষয়সহ পরিবেশগত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদের মতে, দ্রুত এই অবৈধ উত্তোলন বন্ধ করা না হলে প্রাকৃতিক এই সম্পদ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও দৃষ্টিভঙ্গি

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, লুটপাট ঠেকাতে বিভিন্ন অভিযান চালানো হলেও অপরাধীরা গা ঢাকা দিচ্ছে। সম্পূর্ণ লুটপাট রোধে প্রয়োজন আরও কঠোর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।

স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ এখনও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং ভবিষ্যতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পর্যটন খাতে সাদাপাথরের গুরুত্ব

সাদাপাথর ছিল সিলেট অঞ্চলের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতো। পর্যটকরা এখানে এসে সাদা পাথরের বিশাল বিস্তার ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন।

বর্তমানে এই লুটপাটের কারণে পর্যটক সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাদাপাথরের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা না হলে তা শুধুমাত্র স্থানীয় অর্থনীতির জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও বিরাট ক্ষতি হবে। অবৈধ লুটপাট অব্যাহত থাকলে এক সময় এই জায়গাটি মরুভূমির মতো শুন্য ভূমিতে পরিণত হবে।

তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছেন।

MAH – 12269 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button