ঘুমধুমে স্থলবন্দর করার পরিকল্পনা সরকারের: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাংলাদেশের সরকার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে একটি স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আজ শনিবার সকালে ঘুমধুম সীমান্ত সড়ক ও স্থলবন্দরের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ভবিষ্যতে মিয়ানমারে যা-ই থাকুক না কেন, আমাদের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের একটা সম্পর্ক আগে ছিল, এখনো আছে এবং থাকবে। রোহিঙ্গারা যেহেতু ওই এলাকার, কাজেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিকল্পনা করে রাখব, যাতে এখানে একটি স্থলবন্দর করা যায়।”
স্থলপথের সুবিধা
তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে নৌপথের চেয়ে স্থলপথ সুবিধাজনক। ঘুমধুমের এশিয়ান অঞ্চলের আন্তদেশীয় মহাসড়ক দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সহজ। টেকনাফে আমাদের একটি বন্দর আছে মিয়ানমারের সঙ্গে। একই সঙ্গে ঘুমধুমে স্থলবন্দর নির্মাণেরও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি হবে আরাকান বা রাখাইনের সঙ্গে আমাদের সহজ স্থল যোগাযোগ।”
টেকনাফ বন্দরের অবস্থা
উপদেষ্টা বলেন, “টেকনাফ বন্দরকে আমরা স্থলবন্দর বলি, আসলে এটি স্থলবন্দর নয়। এটি হয়তো নৌবন্দরে পরিণত হবে। সেই সঙ্গে এটিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন ন্যস্ত করা যেতে পারে।”
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি
এম সাখাওয়াত হোসেনের সফরকালে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মানজারুল মান্নান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুল্লাহ ইয়ামিন, কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফারুক হোসেন খানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শন
পরে উপদেষ্টা কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর ও মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, “ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত বাণিজ্য কীভাবে সচল রাখা যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।”
ব্যবসায়ীদের সমস্যা
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিদর্শনকালে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর ও সাদ্দাম হোসেনসহ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যা ও অনিয়মের বিষয় উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। এ সময় উপদেষ্টা এসব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীদের।
স্থলবন্দর পরিচালনাকারী ইউনাইটেড গ্রুপ
উপদেষ্টার টেকনাফ স্থলবন্দর সফরকালে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থলবন্দর পরিচালনাকারী ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার জায়েদ আহসান, টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
সীমান্ত বাণিজ্যের অবস্থা
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যবাহী কার্গো বোট আটকের ঘটনায় জান্তা সরকার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ২৩ দিন ধরে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী বোট আসেনি।
ঘুমধুমে স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।