বিশ্ব

গাজায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে জিম্মি-বন্দি বিনিময়: আজকের পরিস্থিতি

গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতি রক্ষায় আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) হামাস তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় এই বিনিময় চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে, যা প্রায় এক মাসের যুদ্ধবিরতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

জিম্মি ও বন্দিদের পরিচয়

হামাসের মুক্তি দিতে যাওয়া তিন ইসরায়েলি জিম্মি হলেন: আয়ার হর্ন, সাগুই ডেকেল-চেন এবং আলেকজান্ড্রে সাশা ত্রোফানভ। অন্যদিকে, ইসরায়েল যে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, তাদের মধ্যে ৩৬ জন আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ৩৩৩ জন গাজার বাসিন্দা, যাদেরকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রেক্ষাপট

গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় হামাস নারী, শিশু ও প্রবীণসহ ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এ পর্যন্ত হামাস ২১ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ১৬ জন ইসরায়েলি এবং পাঁচজন থাই নাগরিক। ইসরায়েল প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও উত্তেজনা

সম্প্রতি হামাস অভিযোগ করে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ তীব্র শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও তারা হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তাদের দাবি, বরং হামাসই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হামাস যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা হবে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪৮,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া গাজার বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও পুনর্গঠন

আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন, তার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। এ সহায়তা গাজার মানুষের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে গাজার পুনর্গঠন এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির জন্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

আজকের জিম্মি-বন্দি বিনিময় যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে এই প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button