রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা সেনাদের সম্মান জানালেন কিম জং-উন

পিয়ংইয়ংয়ে কিম জং–উনের সম্মাননা অনুষ্ঠান
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং–উন রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে লড়াই করা দেশের সেনাদের ‘বীরত্বপূর্ণ’ কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মান জানিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ শুক্রবার ২২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টির সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে কিম জং–উন সেনাদের কৃতিত্বের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে কিম জং–উন বলেন, “বিদেশের মাটিতে লড়াই করার মাধ্যমে আমাদের সেনারা সত্যিকারের বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। কুরস্ককে মুক্ত করার জন্য তারা যে মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা আমাদের বীর সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগের সুস্পষ্ট প্রমাণ।”
কেসিএনএ আরও জানায়, অনুষ্ঠানে কিম জং–উন বিদেশে নিহত উত্তর কোরিয়ার সেনাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়াও, রাশিয়া থেকে ফিরে আসা সেনাদের জন্য কনসার্ট ও সামাজিক ভোজসভার আয়োজন করা হয়, যেখানে নিহত সেনাদের পরিবার ও পরিজনও অংশ নেন।
বিদেশী মাটিতে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ভূমিকা
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা এপ্রিল ২০২৫ মাসে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় ১৫,০০০ উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬০০ জন নিহত হয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষের সঙ্গে লড়াই করা এই সেনারা বিদেশি মাটিতে যুদ্ধের জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, এই অভিযান কেবল রাশিয়ার সামরিক প্রয়াসকে সমর্থন করেছে না, বরং উত্তর কোরিয়ার সেনাদের যুদ্ধ দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা ও উচ্চমাত্রার প্রশিক্ষণ প্রদর্শন করেছে।
কিম জং–উনের সম্মাননা প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এটি দেশটির ভেতরের জনমতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনীতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।
সম্মাননা অনুষ্ঠান ও সামাজিক আয়োজন
কেসিএনএ অনুসারে, কিম জং–উন সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে সৈনিকদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেনা কমান্ডার, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এবং বিভিন্ন ইউনিটের যোদ্ধারা। অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রদর্শিত হয় সেনাদের অভিযানের ভিডিও ও ফটো, যা তাদের সাহসিকতা ও সাফল্যের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে ফিরে আসা সৈনিকদের জন্য একটি কনসার্ট আয়োজন করা হয়। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, এবং নৃত্য পরিবেশিত হয়। পরিশেষে, একটি ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। এই ভোজসভা সৈনিকদের আত্মত্যাগ ও পরিবারের সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বিদেশী মাটিতে লড়াই করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ কেবল রাশিয়ার সামরিক সহায়তা প্রদান নয়, বরং উত্তর কোরিয়ার সামরিক দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবকে প্রকাশের একটি প্রচেষ্টা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এবং পশ্চিমা দেশগুলো এই ঘটনাকে গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের মতে, বিদেশে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়তে পারে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করতে পারে।
ইতিহাসে বিদেশী অভিযান
উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সংঘাতে অংশ নিয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৫০-এর দশকের কোরিয়ান যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন শান্তি রক্ষার মিশনে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার পাশে অংশ নেওয়া এই অভিযান তাদের সাম্প্রতিক এবং সর্বাধিক আলোচিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কিম জং–উনের বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতি
কিম জং–উন সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের বীর সেনারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা কেবল তাদের নিজস্ব নামই নয়, পুরো জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছে। ভবিষ্যতেও আমাদের দেশের সেনারা যে প্রতিশ্রুতি এবং আত্মত্যাগের মানসিকতা প্রদর্শন করবে, তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।”
তিনি আরও যোগ করেন, “নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সমর্থন নিশ্চিত করতে আমরা সব রকম ব্যবস্থা নেব। এই বীরত্ব শুধু সামরিক স্তরে নয়, দেশীয় সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয়কেও সমৃদ্ধ করেছে।”
বিশ্লেষণ
কিম জং–উনের এই সম্মাননা প্রদানের পদক্ষেপটি কেবল দেশীয় সামরিক নীতি নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিদেশি মাটিতে লড়াই করা সেনাদের বীরত্বের স্বীকৃতি, তাদের আত্মত্যাগের প্রশংসা, এবং পরিবারের প্রতি সামাজিক সহমর্মিতা—সব মিলিয়ে এটি একটি বিস্তৃত এবং মানবিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে এই ধরনের সম্মাননা অনুষ্ঠান উত্তর কোরিয়ার সামরিক নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, এবং অভ্যন্তরীণ জনমতের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার সেনাদের রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য কিম জং–উনের সম্মাননা প্রদানের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে নজর কেড়েছে। এটি কেবল সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা নয়, বরং দেশের বীরত্ব, আত্মত্যাগ, এবং পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।
MAH – 12446 , Signalbd.com