ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে

ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি বাড়ছে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে। চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের পর অ্যাপল বিকল্প উৎস হিসেবে ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। এতে ভারতের আইফোন উৎপাদন ও রপ্তানি দুই-ই বেড়েছে।
ভারত থেকে রপ্তানি বাড়ার মূল কারণগুলো:
১. চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক নীতির চাপ
- চীনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ৫৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা এবং ইতিমধ্যে কার্যকর হওয়া উচ্চ হারে শুল্ক অ্যাপলকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করেছে।
- চীনে উৎপাদিত আইফোনে মূল্য বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে অ্যাপল ভারতে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়েছে।
২. ভারতে উৎপাদনের পর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রবণতা
- মার্চ–মে ২০২৫ সময়ে ফক্সকন ভারতে তৈরি ৩০২ কোটি ডলারের আইফোন রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৯৭% গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
- গত বছর একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল মাত্র ৫০%—এক বছরের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
৩. প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সুবিধা উন্নয়ন
- চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে রপ্তানির সময় ৩০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৬ ঘণ্টা করেছে অ্যাপল, যার ফলে দ্রুত সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।
- অ্যাপল মার্চে ভারত থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের আইফোন ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৬i মডেল চার্টার্ড বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য:
রপ্তানি পরিসংখ্যান
- ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই (মে পর্যন্ত) ফক্সকন ৪৪০ কোটি ডলারের আইফোন রপ্তানি করেছে, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের (৩৭০ কোটি ডলার) চেয়েও বেশি।
টাটা ইলেকট্রনিকসের অংশগ্রহণ
- টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও এখন আইফোন রপ্তানি করছে। মার্চ-এপ্রিলে তাদের উৎপাদিত ৮৬% আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে গেছে।
ভারতে কর্মসংস্থান
- যদিও মূল্য সংযোজন (value addition) কম—শুধু ৩%—তবু এতে ভারতে বড় আকারে কর্মসংস্থান হচ্ছে।
- বর্তমানে ভারতে প্রায় ৬০,০০০ জন কর্মী আইফোন সংযোজনের কাজ করছেন, চীনে এর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে অ্যাপলের সিইও টিম কুককে ভারতে উৎপাদনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন:
“আমরা চাই না আপনি ভারতে উৎপাদন করুন। ভারত নিজেদের মতো ভালো করছে। আপনি যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন করুন।”
তবুও, শুল্ক, ব্যয় এবং উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় অ্যাপল ভারতকেই বেছে নিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে আইফোন সরবরাহে ভারতের ভূমিকা
- ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ১৮% ছিল ভারত থেকে,
- ২০২৫ সালে এটি বেড়ে ২৫-৩০% হবে বলে মনে করছেন কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের বিশ্লেষক প্রচীর সিং।
কে কতটা আয় করে একটি আইফোন থেকে?
একটি ১,০০০ ডলারের আইফোনের মূল্য বণ্টন (GTRI অনুযায়ী):
দেশ/প্রতিষ্ঠান | আয় (ডলার) |
---|---|
Qualcomm, Broadcom (মার্কিন) | $80 |
Taiwan (চিপ) | $150 |
South Korea (OLED, মেমোরি) | $90 |
Japan (ক্যামেরা) | $85 |
জার্মানি, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া | $45 |
ভারত ও চীন (সংযোজন) | $30 |
ভারত এখন অ্যাপলের ‘অল্টারনেট সাপ্লাই চেইন’ গড়ে তুলতে মূল ভূমিকা রাখছে। শুল্ক ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে চীনের বিকল্প হিসেবে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত ভারতের আয় কম, ভবিষ্যতে হাই-ভ্যালু কম্পোনেন্ট উৎপাদন শুরু হলে এটি বাড়তে পারে।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি এবং দ্রুততর লজিস্টিক ব্যবস্থার কারণে ভারত থেকে আইফোন রপ্তানির গতি বেড়েছে। অ্যাপলের এই কৌশল শুধু বাজার ধরে রাখার জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে একটি বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার কৌশলের অংশ।