
ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় জামায়াতের খুলনা দাকোপ উপজেলার আমীরসহ দু’জন নিহত এবং অন্তত দশজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুর্ঘটনার সময় ও স্থান
শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভোর তিনটার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে খুলনা থেকে একটি বাস কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে রওয়ানা হয়। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশমুখে দাঁড়ালে পেছন থেকে দুটি বাস এবং একটি পিকআপ গাড়ি ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই খুলনার দাকোপ উপজেলার জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আবু সাইদ নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন কর্মী মারা যান।
দুর্ঘটনার কারণ ও পরিস্থিতি
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাস দাঁড়ানোর সময় পেছন থেকে আসা যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয়। এক্সপ্রেসওয়ে অংশটি খুবই ব্যস্ত ও সংকীর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি ছিল। এতে দুর্ঘটনার মাত্রাতিরিক্ত চাপের ফলে বাস ও অন্যান্য যানবাহনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত, যার কারণে তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।
স্থানীয়দের বক্তব্য
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই এলাকায় গত কয়েক বছরে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার সঠিক মান বজায় না থাকার পাশাপাশি যানবাহনের অতিরিক্ত গতিও বড় একটি কারণ। বিশেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশমুখগুলো সংকীর্ণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। এসব কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে।
পুলিশের পদক্ষেপ
ফরিদপুর জেলা পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সুপার জানান, আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
জামায়াতের মহাসমাবেশ ও প্রেক্ষাপট
জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশটি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের থেকে হাজার হাজার কর্মী ও সমর্থক অংশগ্রহণ করেন। ফরিদপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত বহু কর্মী বাস ও অন্যান্য যানবাহনে মহাসমাবেশে যোগ দিতে রওয়ানা হয়। দুর্ঘটনার খবর প্রচারের পর জামায়াত নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা: বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, যার ফলে অনেক মানুষ প্রাণ হারান বা গুরুতর আহত হন। প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, রাস্তার খারাপ অবস্থা, ট্রাফিক নিয়মের অপ্রতিপালন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি। বিশেষ করে এক্সপ্রেসওয়ে ও মহাসড়কগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, যানবাহনের নিয়মিত টেকনিক্যাল পরীক্ষা এবং সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য।
সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুর্ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাস দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হন।
- মার্চ মাসে সিলেটের সড়কে ত্রাক্টর ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হন।
- এপ্রিল মাসে রংপুরে একটি পিকআপ দুর্ঘটনায় ১২ জন গুরুতর আহত হন।
এসব দুর্ঘটনা সড়ক নিরাপত্তার তাগিদ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে বাস যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর ফরিদপুরে নেয়া পদক্ষেপ
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত আহতদের হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। আহতদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা বলেন, “আমরা প্রতিদিনই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি। সরকারের উচিত দ্রুত সড়ক নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে প্রতিদিন আরও মানুষ মৃত্যুবরণ করবে।” অনেকে মনে করেন, দুর্ঘটনা হলে কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ সচেতনতা ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি অনেক ভালো হতো।
ফরিদপুরের এই ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল এবং অব্যবস্থাপনার শিকার তা আবারও প্রমাণ করল। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়ের একান্ত প্রয়োজন। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত দায়িত্ব নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেন, সেই প্রত্যাশা।