মোহাম্মদপুরে দিনদুপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দিনের বেলা প্রকাশ্যে ঘটে গেল আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকার ১ নম্বর গেইটের সামনে সুমন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা হঠাৎ এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে সুমনকে ফেলে যায়।
নিহত সুমনের মরদেহ শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখনো নিহতের বিস্তারিত পরিচয় এবং ঘটনার কারণ নিশ্চিত করেনি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই কয়েকজন তরুণ মোটরসাইকেলে এসে সুমনের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে বারবার আঘাত করে ফেলে রেখে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের ব্যস্ত সময়ে এ ধরনের খুনের ঘটনা এলাকাবাসীকে চরমভাবে ভীত করেছে।
পুলিশের প্রাথমিক বক্তব্য
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইবনে মিজান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “মোহাম্মদপুরে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিচ্ছি। হত্যার মোটিভ এবং কারা জড়িত, তা খুব শিগগিরই জানা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
কিশোর গ্যাং: মোহাম্মদপুরের এক অজানা আতঙ্ক
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, লালবাগ, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের গ্যাং সদস্যরা প্রকাশ্যে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
গত কয়েক মাসে মোহাম্মদপুরে চুরি, ছিনতাই, মারামারি এবং খুনের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের নাম এসেছে একাধিকবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারের অনিয়মিত নজরদারি, মাদকাসক্তি এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোর অপরাধ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ
স্থানীয়দের অভিযোগ, মোহাম্মদপুরে পুলিশি টহল ও নজরদারি পর্যাপ্ত নয়। দিনের বেলা যেখানে প্রচুর মানুষ চলাচল করে, সেখানেই প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব হচ্ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দিনের বেলায় যেখানে এত মানুষ, সেখানে যদি কেউ এভাবে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ?”
এলাকাবাসীরা দ্রুত এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন এবং পুলিশের টহল জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অতীতে এমন ঘটনা
এর আগেও মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের দ্বারা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক মাস আগে একই এলাকায় সংঘবদ্ধ কিশোরদের ছুরিকাঘাতে এক কলেজ শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন।
এ ধরনের ঘটনাগুলো বারবার ঘটলেও অপরাধীদের বেশিরভাগই শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে, যা নতুন করে অপরাধে উৎসাহ জোগাচ্ছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশের তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে কয়েকজন সন্দেহভাজনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছি। অপরাধীদের শনাক্ত করে শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কিশোর অপরাধ দমন করতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। গ্যাং কালচার রুখতে হলে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর নজরদারি জরুরি।
এছাড়া তারা মনে করেন, যারা কিশোরদের অপরাধে প্ররোচিত করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।
সারসংক্ষেপ
মোহাম্মদপুরে সুমনের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক বড় আঘাত। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড দেখিয়ে দিল, কিশোর অপরাধ এখন কতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত, অপরাধীদের বিচার এবং এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। প্রশ্ন থেকে যায় – আমরা কি আবারও এমন নৃশংস দৃশ্যের সাক্ষী হবো, নাকি এবারই হবে অপরাধ দমনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত?
এম আর এম – ০৫২৩, Signalbd.com